ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলার ৮টি আসনের মধ্যে ৭টির প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এরমধ্যে দুইটি আসনে দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ।
তাঁরা হলেন টাঙ্গাইল-৩ ঘাটাইল আসনে এসএম ওবায়দুল হক নাসির। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
আরেক নতুন মুখ টাঙ্গাইল- ৬ (নাগরপুর দেলদুয়ার) আসনে রবিউল আওয়াল লাভলু। তিনি নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য এবং যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মী এবং তাদের ব্যক্তিগত অনুসারীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। মনোনয়ন পাওয়ায় পর থেকে জোরেসোরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। গত দুইটি নির্বাচনে হারানো আসন পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে কাজ করছেন।
ঘাটাইল আসন- পাহাড় ও সমতলের ১৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে ঘাটাইল উপজেলা গঠিত।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে।১৯৭০, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি শামসুর রহমান খান শাহজাহান।
১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শওকত আলী ভূইয়া। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সাইদুর রহমান খান মোহন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ( ফেব্রুয়ারি ও জুন) এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে টানা চার বার এমপি হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ বিএনপি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন। ২০০৮ সালে ডা. মতিউর রহমান মতিন rআওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন। তিনি ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। উপ-নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা এমপি হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিনা-প্রতিদ্বন্দিতায় আবারো নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি আমানুর রহমান খানের পিতা আতাউর রহমান খান। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সতন্ত্র এমপি হন আমানুর রহমান খান রানা। আতাউর রহমান খান হলেন প্রয়াত শামসুর রহমান খান শাহজাহানের ছোটভাই।
এ আসনে এবার বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এরমধ্যে সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম ওবায়দুল হক নাসির ও মাইনুল ইসলাম। মনোনয়ন ঘোষণার পর লুৎফর রহমান খান আজাদের অনুসারী সমর্থকরা মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মিটিং মিছিলও করেছেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এসএম ওবায়দুল হক নাসির বলেন, গত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। হামলা মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। তবুও আদর্শ থেকে সরে যাইনি। তাই দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে এবং ঘাটাইলের মানুষের ভালবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। ঘাটাইলের জনগণকে নিয়ে আমরা বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করব। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই। আশা করি জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিকরা মান অভিমান ভুলে মিলেমিশে একত্রে কাজ করবেন।
এদিকে নাগরপুর ও দেলদুয়ার দুটি উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৬ আসনটি গঠিত। একসময় দেলদুয়ার উপজেলাটি টাঙ্গাইল সদর আসনের সাথে যুক্ত ছিল।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শওকত আলী খান (প্রয়াত) নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নূর মুহাম্মদ খান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে নূর মুহাম্মদ খান আবারো নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের নির্বাচিত হন। একই সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী দ্বিতীয়বার এমপি হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুল বাতেন এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন।
এআসনে ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গৌতম চক্রবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি কয়েক বছর আগে পরলোকগমণ করেন।
এবার টাঙ্গাইলের ৮ টি আসনের মধ্যে বিএনপির সবচেয়ে বেশি (১৭ জন) মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এ আসনেই।
মনোনয়নপ্রাপ্ত রবিউল আওয়াল লাভলু বলেন, আমি শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একজন ক্ষুদ্র সৈনিক এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কর্মী। “দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনের মাধ্যমে সেটা যথাযথভাবে পালন করবো। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ নাগরপুর-দেলদুয়ার গড়ে তুলতে চাই।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। জাতীয় পার্টি (জাপার) নেতাকর্মীরাও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
ভোটযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফতে মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্যান্য দল।











