টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার অভিযোগে এনে একযোগে বিএনপির ১১ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার গভীর রাতে পাঁচজন ও আজ বেলা দুইটার আগে ছয়জন তাদের পদত্যাগপত্র ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই পদত্যাগের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও একই অভিযোগ এনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আরও দুই শতাধিক পদধারী নেতা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু।
একযোগে পদত্যাগ করায় সখীপুরে বিএনপির রাজনীতিতে হঠাৎ ভূমিকম্পে দল তছনছ হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে।
যাঁরা পদত্যাগ করেছেন তাঁরা হচ্ছেন—সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাসেদ, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, বিএনপির সদস্য আশরাফুল আলম, গজারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রউফ, বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লতিফ মিয়া, গজারিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. বিপ্লব, গজারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মো. মজিবর ফকির, গজারিয়া ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ, গজারিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক মো. রবিউল আউয়াল, দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান।
পদত্যাগপত্র বিশ্লেষণ ও বিএনপি দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণ। এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এ কারণে আহমেদ আযম খান নির্বাচনে তাদের ভোট টানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফা গোপন বৈঠক করেছেন। দলীয় বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা সভা-সমাবেশে তাঁরা (আ.লীগ) সামনের সারিতে বসছেন। কেউ কেউ বক্তব্য দিচ্ছেন। এদের অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলাও আছে। পদত্যাগকারী নেতাদের অভিযোগ— আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করায় তারা পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগ প্রসঙ্গে সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি আযম খান আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে ভোট পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুরুত্ব বেশি দিচ্ছেন। তাদের সামনের সারিতে চেয়ার দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে নেতা আমাদের বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছেন।
সম্প্রতি দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু আজ বেলা ১২ টার দিকে তিনি পদত্যাগ করে তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আযম খান গত বুধবার টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক খালেক মন্ডলকে হুমকি ও গালাগাল করেছেন। গত রোববার রাতে মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পর হঠাৎ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রচার করেছেন। গত ১৭ বছর দলের জন্য জেল জুলুম খেটেছি। আওয়ামী লীগের নির্যাতন সহ্য করেছি। তিনি সেই স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করছেন। তাদের সামনের সারিতে স্থান দিচ্ছেন। নেতার এসব কর্মকাণ্ডে আমরা অপমান বোধ করছি। আমরা মস্তিষ্ক বিকৃতি আহমেদ আযম খানের দলীয় মনোনয়ন বাতিল দাবি করছি। তা না হলে আজকালের মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আরও দুই শতাধিক পদধারী নেতা সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করবেন। ইতিমধ্যে তারা আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন আজ সকালে বলেন, দলকে বিতর্কিত করতে আমাদের দলের ভেতর একটি পক্ষ গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তারাই বিষয়টির টের পেয়ে তারা আগেই পদত্যাগ করলেন। তাঁরা পরিকল্পিতভাবে আহমেদ আযম খানকে বিতর্কিত করার জন্য মাঠে নেমেছেন। একজন শিল্পপতি ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দান অনুদানের নামে টাকা ছড়াচ্ছেন। তাদের ইন্ধন যোগাচ্ছেন।
আহমেদ আযম খান বলেন, একটি মহল সব সময় ধানের শীষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। বিএনপি ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। আগামী নির্বাচনে কোন ষড়যন্ত্রই ধানের শীষের বিজয়কে ঠেকাতে পারবেনা। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।











