বিশেষ প্রতিবেদক : তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরি করার অভিযোগ উঠলেও রহস্যজনক কারণে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার শাহনাজ পারভীন রূপা ওরফে রিপা (২৩)।
একাধিক বিয়ে হলেও রূপ ও যৌবনের ঝলক ছড়িয়ে নিজেকে কুমারী দাবি করে বিত্তবান পরিবারের যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এঘটনায় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর শাহনাজ পারভীন রূপা ওরফে রিপা শিক্ষাগত সনদপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশোধনের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।
নিজেকে সতী-স্বাধ্বী সাজাতে ঘনিষ্টতা তৈরী করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথেও।
স্থানীয়দের বক্তব্য –
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য জানান, টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শরীফ নজরুল ইসলামকে পালক পিতা সাজিয়ে মেয়ে পরিচয় দেওয়ায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, চেয়ারম্যানের সাথে ইদানীং ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে রূপার।
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্কের পরিচয় দিয়ে ইউপি সদস্য ও কর্মচারীর সাথে খারাপ আচরণ করে।
লোকমুখে শোনা যায়, বিয়ে করতে গেলেও রূপা ও চেয়ারম্যানের বিয়ে পড়াতে অস্বীকৃতি জানান কাজী।
যদুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ফিরোজ আহমেদ তার বিরুদ্ধে রূপার সাথে ঘনিষ্ঠতা ও বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সরকারি চাকুরী বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে সে তথ্য গোপন করে চাকুরী নিয়েছে কিনা; জন্ম ও মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর লাগে তখন আমি স্বাক্ষর দিয়েছি; রূপার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ কোন সম্পর্ক নেই।
বিস্তারিত তথ্য প্রমাণাদি –
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই-তে চাকুরির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন রুপা। সেখানে নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করে স্থানীয় ও বর্তমান ঠিকানার জায়গায় পিতার নাম শামছু উদ্দিন, মাতা হেলেনা খাতুন, গ্রাম – দত্তপাকুটিয়া, উপজেলা ফুলবাড়িয়া, জেলা ময়মনসিংহ আবেদন করে তিনি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে নিজেকে অবিবাহিত এবং পিতা মাতার নাম শামছু উদ্দিন, মাতা হেলেনা খাতুন, গ্রাম মমিনপুর, উপজেলা ধনবাড়ী উল্লেখ করে আবেদন করেন শাহনাজ পারভীন রূপা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউপি সদস্যকে ম্যানেজ করে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার দত্তপাকুটিয়া গ্রামের মামা শামছু উদ্দিন, মামী হেলেনা খাতুনকে পিতা মাতা সাজিয়ে ধনবাড়ী উপজেলার মমিনপুর গ্রামের স্থানীয় ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করে জন্ম সনদ ও নাগরিকত্ব সনদ হাসিল করেন রূপা।
শাহনাজ পারভীন রূপার শিক্ষাগত সনদপত্র ও সরকারি চাকুরিতে আবেদন এবং কাবিননামায় যে তথ্য দিয়েছে তার একটির সাথে আরেকটির মিল নেই। রুপার প্রথম বিয়ে হয় ২০১২ সালে রোকনুজ্জামান এবং দ্বিতীয় বিয়ে ২০১৪ সালে মনির হোসেনের সাথে। দুটি কাবিন নামায় রুপার মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র শিউলি বেগম (৯৩২১২০৪৩৫৭৪০); স্বামী ইদ্রিস আলী মণ্ডল, মাতা কুলসুম বেগম; পিতা ইদ্রিস আলী মণ্ডল (৯৩২১২০৪৩৫৭৩৫); পিতা চান মিয়া মণ্ডল, মাতা ছাহেরা বেগম রয়েছে।
তার এসএসসি ও এইচএসসি সনদপত্রে একই নাম থাকলেও বর্তমানে দেখা গেছে পিতা শামছু উদ্দিন ও মাতা হেলেনা খাতুন।
কাবিন নামা ও শিক্ষাগত সনদপত্রে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা-মাতার নাম ভিন্ন রকম রয়েছে। সত্য প্রকাশ হয়ে পড়লের কাগজপত্র সংশোধনে ছুটোছুটি করছেন রূপা।
ইতোমধ্যে শিক্ষাগত সনদপত্রে বাবা-মায়ের নাম পরিবর্তন করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আবেদন দিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিসেও।
২০১৯ সালে ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন রূপা। সেখানে তিনি তথ্য গোপন করে ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিভাবে চাকরি পেলেন; সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন? যা চাকরিবিধি অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ।
এমন গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে তথ্য গোপনকারীকে চাকরিচ্যুত করার বিধান রয়েছে কিনা জানতে চাইলে; স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শরীফ নজরুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তথ্য প্রমাণে জানা যায় –
২০১২ সালের নভেম্বরে পার্শ্ববর্তী মধুপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে রোকনুজ্জামানের সাথে পারিবারিক ভাবে রূপার বিয়ে হয়। দেড় বছরের মাথায় পরকীয়া প্রেমে পালিয়ে গিয়ে রোকনুজ্জামানের বন্ধু একই উপজেলার মোল্লাবাড়ী এলাকার মৃত হাজী শহীদ আলীর ছেলে মনির হোসেনের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
এরপর আগের দুটি বিয়ের তথ্য গোপন করে নড়াইলের লোহাগড়া থানার ইতনা গ্রামের মৃত জালাল বিশ্বাসের ছেলে বিএম সোহেল রানার সাথে তৃতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যদুনাথপুর ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি জানান, শাহানাজ পারভিন রূপা বিভিন্ন ছেলের সাথে একাধিক বিয়ে করছে; তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে তাদের তালাকও দিয়েছে।
বর্তমান চেয়ারম্যান মীর ফিরোজ আহমেদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে; এছাড়াও তার বাবা-মা’র নাম গোপন করে সরকারি চাকুরী করছেন। তথ্য গোপন করে চাকরী নিলেও কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
রূপার সাবেক স্বামী নড়াইলের সোহেল রানা জানান, তার সাথে মুঠো ফোনে পরিচয়; প্রণয় ও পরিবারের অমতেই ঢাকায় বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের কয়েকমাস পর নড়াইলে সংসার শুরু করলে সেখানে ভাতিজা সস্পর্কের এক বন্ধুর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে রূপা। বিষয়টি জানাজানি ও হাতেনাতে ধরা পড়লে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরবর্তীতে শাহনাজ পারভীর রূপাকে তালাক প্রদান করেন তিনি।
রূপার অপর সাবেক স্বামী মনির হোসেন জানান, স্বামী থাকা সত্ত্বেও আমার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলে; পরে বিয়ে করে প্রায় ছয় মাসের মতো সংসার করি।
এসময়ে রূপা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অপর ছেলের সাথে মোবাইলে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে কারণে রূপাকে তালাক দেই।
তিনি আরো জানান, এরকমভাবে অনেক ছেলেকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছে সে। এটা তার একরকম নেশা।
অপরদিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগে শাহনাজ পারভীন রূপা ওরফে রিপার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক যুবক।
আসামীরা হলেন, শাহনাজ পারভীন রূপা ওরফে রিপা (২৩), রুপার বোন সিমা আক্তার (১৯), রুপার মা শিউলি বেগম।
শাহনাজ পারভীন রূপার কথা –
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহনাজ পারভীন রূপা মুঠোফোনে জানান, মামলা চলমান রয়েছে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য –
এ বিষয়ে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আমাদের অফিসের আবেদন করেছেন; প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখে তার জাতীয় পরিচয় পত্রটি সংশোধন হওয়ার মতো হলে সংশোধন করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গণি জানান, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’