ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর, ভূয়াপুর ও গোপালপুর উপজেলার প্রায় ৩ হাজার জেলে। সরকার নির্ধারিত ২০ কেজি করে চাউল সকল জেলেদের দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় অর্ধেক জেলেই সরকারের অনুদান পায়নি।
এসময় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মাছ মারা বন্ধ করেছে, নদীতে নামতে দেয়না, অনুদানও দেয়না। পেটের দায়ে নদীতে নামলে, জেল দেয়। নিষেধাজ্ঞার এই সময়তে সরকারের কাছে সব জেলে পরিবারগুলোর জন্য পরিমানমত অনুদানের দাবি জানান তারা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় তিন হাজার জেলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। আমরা সকল জেলের অনুদানের জন্য তালিকা পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ১৫০৬ জন জেলের জন্য ২০ কেজি করে ৩০ মেট্টিক টন চাউল অনুদান এসেছিল। অনুদান কম আসায় আমরা সকল জেলেকে অনুদান দিতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ ধরার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৩ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। ৫০ জন জেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ৭১ হাজার দুইশ’ টাকা জরিমানা ও ৪৯০ কেজি ইলিশ এবং ৫ লাখ ২০৯ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত ইলিশ জেলার বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। এ অভিযান সফল হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঠান্ডু শিকদার বলেন, ‘ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে জেলেরা নদীতে নামতে পারে না বিধায় তাদের অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হয়েছে। অভাবের কারণে কিছু সংখ্যক জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে যায়। এ কারণে অনেক জেলে সাজা পাচ্ছেন। এ ছাড়াও অনেক জেলেকে জরিমানাও দিতে হয়েছে। একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি কারাবন্দী হওয়ায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ২০ কেজি করে চাউল অনুদান দিয়েছেন। আবার অনেক জেলে সরকারের এই অনুদান পায়নি। এই ২০ কেজি চাউলে তো আর ৫-৭ জন সদস্যের একটি পরিবার চলতে পারে না। একটি সংসারে এক মাসে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এজন্য অনুদানের পরিমাণ আরও বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’
জানা যায়, ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় টাঙ্গাইলে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে ধার-দেনা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনভাবে দিন কাটিয়েছেন বলে জেলের দাবি। এই ২২ দিন অপেক্ষার পর জীবিকার তাগিদে আবার যমুনা নদীতে নেমেছেন জেলেরা।
এই ২২ দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭১ হাজার দুইশ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ৪৯০ কেজি ইলিশ ও ৫লাখ ২০৯ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।