টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধর্ষনের বিচার চাওয়ায় প্রভাবশালী মহলের চাপে ইউপি চেয়ারম্যান কলেজ ছাত্রীকে বানিয়ে দিলেন দেহ ব্যবসায়ী। এমনই ঘটনা ঘটেছে নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামে। ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান তার পরিষদের প্যাডে কলেজ ছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার নিরহ কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে এ মাসের ৫ তারিখ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর কলেজ ছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে ১২ দিন যাবত বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। বন্ধ হয়ে গেছে তার কলেজে যাওয়া। ধর্ষনের সঠিক বিচার পাবে কিনা সে বিষয় নিয়েও উদ্বিগ্ন পরিবারটি।
জানা যায়, উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের কৃষকের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (১৭) কে প্রায়ই উত্যক্ত করতো সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কিন্তু ছেলের স্বভাব চরিত্র ভালো না থাকার কারনে মেয়ের বাবা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে লম্পট জুয়েল রানা। জুয়েল রানা ১২ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধুবরিয়া বাচ্চু মিয়ার বীজের সামনে থেকে বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে কলেজ পড়–য়া ছাত্রীকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষন করে। জুয়েল রানা কলেজ ছাত্রীকে তার আত্মীয় বাড়ীতে তিনদিন আটক রাখে। ঐ ছাত্রী কৌশলে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসে তার বাবা মা’কে ঘটনাটি জানায়।
পরে ধুবড়িয়া গ্রামের মাতাব্বদের ধর্ষনের বিষয়টি অবগত করেন। এ নিয়ে ঐ গ্রামের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ধর্ষনের বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মাতাব্বররা বিভিন্ন সময়ে তালবাহানা ও সময়ক্ষেপন করে আসেন। ফলে ঐ ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল টাঙ্গাইল আদালতে ৫জন কে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আসামীরা হলেন সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে মো. জুয়েল রানা (২২), ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে মো. শিপন (২৬), মো. রিপন (২৩), উফাজ (৪২) ও একই গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া (২১)।
পরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা বাদীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিয়ে আসছে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট সি আই ডি দাখিলের পর আসামীরা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে। আসামীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আসামীরা ধুবড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে ধর্ষনের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে উল্টা ঐ ভিকটিমকে দেহ ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আসামীদের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দেয়।
সিআইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ মামলার কলেজ ছাত্রীর বাবা একজন হত দরিদ্র কৃষক। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন এবং এক প্রবাসীর বাড়িতে স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান নিয়ে দূর্বিষহভাবে বসবাস করে আসছেন। ঐ কৃষকের কন্যা ২০১৮ সালে ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে এক কলেজে লেখাপড়া করে আসছে। ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঐ ছাত্রীর সঙ্গে জুয়েল রানার পরিচয় হয়। জুয়েল এ ছাত্রীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে জুয়েল রানা এ ঘটনাটি ঘটায়।
সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তারা ঐ কৃষকের পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার কোন অভিযোগ পাননি।
এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রীর বাবা জানান, চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান আমি দিতে পারি তাই দিয়েছি। ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন মামলা আছে কি না আমি জানিনা। এলাকার লোকজন বলেছে তাই আমি এ প্রতিবেদন দিয়েছি।
নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ জানান, চেয়ারম্যান কলেজ ছাত্রীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সঠিক নয়। এ পরিবারের নামে মাদক ও দেহ ব্যবসার বিষয়ে এলাকায় ও থানায় কোন অভিযোগ নেই। এ মামলার আসামীরা মেয়ের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকী প্রদান করে আসছে। আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে এবং আসামীরা পলাতক আছে। মেয়েটির পরিবারের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট এস আকবর খান বলেন, আদালত কর্তৃক কাউকে দোষী না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা তো দূরের কথা মাদক ও দেহ ব্যবসায়ী বলে কাউকে আক্রান্ত করার এখতিয়ার কারও নেই। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।