অলক কুমার : টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সদস্য পদ পেতে হিরিক পড়েছে যুবলীগ নেতাকর্মীদের। প্রতিটি পদের বিপরীতে অন্তত সাড়ে চার জন প্রার্থী হয়েছেন।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিতে পদ পেতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ৪৬০টি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ের পরও কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিশেষ অনুরোধে এখনো জীবন বৃত্তান্ত হাতে আসতেছে।
আরো পড়ুন – অব্যাহতি দেওয়ার ৭ বছর পর থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষক কর্মস্থলে বহাল!
সেখানেও ৫০টির বেশি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে।
অপরদিকে, জেলা কমিটিতে পদ পেতে ও পদ দিতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ থাকলেও কেউ মুখ খোলেনি।
অনুমোদিত সুপার ফাইভ কমিটি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।
জানা যায়, গঠনতন্ত্র মাফিক ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী যুবলীগ গঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু ২৯ মে সম্মেলনের পর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়।
সেখানে মো. মাসুদ পারভেজকে সভাপতি ও আবু সাইম তালুকদার বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সেই সুপার ফাইভের সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান খান মিন্টু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার মানিক ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে; বাকি রয়েছে ৯৬টি পদ।
যার বিপরীতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর জীবন বৃত্তান্ত পড়েছে কমিটিতে অন্তুর্ভূক্তির জন্য।
সেখানে রয়েছে দলীয় জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ নেতাদের সুপারিশ সহ জীবন বৃত্তান্ত।
দেখা যায়, ৯৬টি পদের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৪৬০ জন নেতাকর্মী কমিটিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
সে হিসেবে প্রতিটি পদের জন্য প্রায় পাঁচ জন তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য –
টাঙ্গাইল জেলার কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন করার দায়িত্ব সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে।
তবে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নাই।
যোগ্যতার ভিত্তিতেই যুবলীগের নতুন কমিটিতে স্থান পেতে হবে।
সেই লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের জীবন বৃত্তান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যাচাই বাছাই চলছে। এমাসেই কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
আরো পড়ুন – বড়মনি আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চান, আমি সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই
এবিষয়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার মানিক বলেন, বড় দল, এখানে কর্মীও বেশি।
তাছাড়া এর আগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছিল।
সেই সময় দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, সম্মেলন না হওয়ার কারণে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন পর্যায় ও সময়ে দলের ত্যাগী ও নির্ভিক কর্মীরা স্থান পায়নি।
একারণ যুবলীগের কমিটিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য আগ্রহ নেতা-কর্মীদের।
কমিটিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের উপস্থিতিতে টাঙ্গাইলে যে সম্মেলনে সুপার ফাইভ কমিটি হয়েছে।
এই সুপার ফাইভ কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠাবেন।
কে থাকবে কে থাকবে না, তা কেউ বলতে পারবে না। আর টাকার বিনিময়ে কমিটিতে সদস্য হওয়ার বা পদ দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির বক্তব্য –
বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইম তালুকদার বিপ্লব বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সততার সাথে রাজনীতি করতেছি।
বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি।
এই মাসেই (সেপ্টেম্বর) আমরা ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য জীবন বৃত্তান্তসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাবো।
বাকি জীবন বৃত্তান্ত জেলা কমিটিতে জমা থাকবে। যদি কেউ বাদ পড়ে তাহলে নতুন জীবন বৃত্তান্ত পাঠানো হবে।
এসময় তিনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিষয়ে বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন; কেউ কোন প্রমাণ দিতে পারবে না।
আর্থিক লেনদেনের কোন প্রশ্নই উঠে না। ত্যাগী ও আদর্শিক নেতাকর্মীদেরই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
আরো পড়ুন – ধর্ষণ মামলায় বড়মনির জামিন স্থগিতই থাকছে
এবিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সভাপতি মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি ২৪ বছর যাবৎ যুবলীগের সাথে যুক্ত আছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকে নিয়ে আমাকে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন।
আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।
আমি সভাপতি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি না, কারো সাথে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দিবো বা সদস্য করার কথা আলোচনা করেছি; কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না।
নতুন কমিটিতে দলের জন্য ত্যাগীরাই স্থান পাবে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।