সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

বড়মনি আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চান, আমি সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই

সংবাদ সম্মেলন

ডেস্ক নিউজ : সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্যের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড়মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা সেই কিশোরী (১৭)।

অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড়মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূয়াপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলা করার পর থেকেই তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন – ডিএনএ টেস্টে সহযোগিতা করছেন না বড় মনির : আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ

এখন সন্তানের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কিন্তু বড় মনি প্রভাব খাটিয়ে এই ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।

সোমবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান ওই কিশোরী।

এ সময় তার পাশে এক ফুফু ছাড়াও ভুক্তভোগী কিশোরীর শিশু সন্তান ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী কিশোরী যা বলেন –

তারা (বড় মনি, ছোট মনি) আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন; আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চাচ্ছেন।

এখন বড় মনি যদি আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমি তাতে রাজি না।

আমি শুধু আমার সন্তানের অধিকার চাই এবং তারা যাতে প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে না পারে, সেটি চাই।

ওই কিশোরীর অভিযোগ, বড় মনি তার সম্পত্তির সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে তাকে সুকৌশলে ধর্ষণ করে এবং অশালীন ছবি তুলেন।

পরে ঘটনাটি কারও কাছে প্রকাশ করতে বারণ করে এবং প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী বলেন, দু’একদিন পরপর বড় মনি আমাকে একই কায়দায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

আমার ছবি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে।

প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ফলে আমি গর্ভবতী হয়ে যাই।

এ ঘটনা বিবাদীকে বললে আমাকে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকে।

পরে বড় মনি গর্ভের বাচ্চার বিষয়ে অস্বীকার করে জোরপূর্বক তার শ্বশুরের বাসায় আমাকে উঠিয়ে নিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।

মামলার বিষয়ে যা বলেন –

মামলার বিষয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মামলা করার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানায় গেলে থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি হয়নি।

আমি দুপুর ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসে থাকার পরও তারা মামলা নেয়নি।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, মামলা রেকর্ড হওয়ার পরও আসামি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেছে; পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করেনি।

এমনকি তিনি থানা পুলিশের সঙ্গেও প্রকাশ্যে ঘুরেছেন।

পুলিশ আমাকে সহযোগিতার বদলে বিভিন্ন সময়ে হয়রানি করেছে। আসামি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত আসামিকে জেলহাজতে পাঠায়।

ওই কিশোরী জানান, বড়মনি জেলহাজতে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

দীর্ঘদিন ডিএনএ স্যাম্পল দিতে গড়িমসি করার পর গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে আসামি ডিএনএ স্যাম্পল দিতে বাধ্য হয়।

আসামি ও আমার প্রায় ২ মাস বয়সের বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার সময় সিআইডি’র কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হই।

আমি ভিকটিম হয়েও তাদের আচরণে মনে হয়েছে আমি একজন আসামি।

বিবাদী কিশোরীর ভয় –

বিবাদী কিশোরী আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি লোকমুখে শুনে আশঙ্কা করছি- পুলিশ প্রশাসনে লোক থাকায় এই মামলার ডিএনএর ফলাফল পরিবর্তন করতে আসামিদের কোনো পেরেশানি হবে না।

তারা প্রভাবশালীদের দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তন করাবেন।

আমি যাতে ডিএনএ স্যাম্পল দিতে না যাই, সে জন্য এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বড় মনিরের পক্ষ থেকে।

আমি টাকা চাই না, আমি আমার বাচ্চার অধিকার চাই।

ডিএনএ স্যাম্পল পরিবর্তন করার জন্য প্রভাবশালী মহলে যে পরিমাণ টাকা বড় মনির পক্ষ থেকে অফার করেছে; এতে আমি ডিএনএ পরীক্ষা ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছি।

আসামিদের হুমকির বিষয়ে ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আমাকে এক ছাত্রলীগ নেতা হুমকি দিয়েছেন।

বড়মনির স্ত্রী আমার মামলার দ্বিতীয় আসামি, আমাকে ফোন করে নানারকম হুমকি দেয়।

আমাকে চারপাশে থেকে লোকজন নজরবন্দি করে রাখে, আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না; আমি স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত।

বড়মনির সঙ্গে রাজনীতি করে- এমন কিছু লোকজন রাত ১২টার পর আমাকে মাঝে-মধ্যে ফোন দিতে থাকে।

আমার আত্মীয়-স্বজন দ্বারা আমাকে এ মামলায় মীমাংসায় আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

পুলিশের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ –

হয়রানির অভিযোগ করে তিনি বলেন, ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি।

উল্টো অনেক সময় পুলিশ দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছি।

আমি ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে আসার পর থেকে লক্ষ্য করি- কিছু লোক আমাকে ফলো করে এবং আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।

এই বিষয়ে আমি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ অভিযোগ দেই।

সেখান থেকে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে টাঙ্গাইল সদর থানায় যোগাযোগ করানো হয়।

সেখানেও আমি থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সম্মুখীন হই।

এখন আপনি কি চান, বড়মনি আপনাকে বিয়ে করতে চাইলে আপনি রাজি কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী ওই কিশোরী বলেন, ‘না আমি বিয়ে করতে রাজি না।

আমি আমার সন্তানের অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই, আসামির শাস্তি চাই।

টাকা দিয়ে যাতে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন এবং মামলা ধামাচাপা দিতে না পারে, সেটিই চাই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’