বিশেষ প্রতিবেদক : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী অংশের তিনটি পয়েন্টে চলছে চোরাই মালের রমরমা ব্যবসা।
স্থানীয় প্রশাসন ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা চলে বলেও অভিযোগ।
আর মোবাইলে-মোবাইলে চলে এই ব্যবসা। আসল সিন্ডিকেট হোতাদের অনেকেই চেনে না বলেও জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানীর কর্মকর্তা ও ট্রাকের চালকদের সাথে যোগাযোগ করে সিমেন্ট, রড, ভুট্টা, ভূষি, আদা ও পিঁয়াজ চোরাইভাবে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ি, জোকারচর ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপ্রান্তে নামানো হয়ে থাকে।
প্রতিটি পণ্যই নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেকেরও কম দামে ক্রয় করে থাকে এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এরপর অধিক লাভে মোবাইলের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে।
স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন যাবত প্রকাশ্যে এ ব্যবস্থা চালিয়ে আসছেন ইউপি সদস্যসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
আনালিয়াবাড়ি এলাকায় ইউপি সদস্য সোনা মিয়া ও মোহাম্মদের নেতৃত্বে চোরাই মালামাল কেনা বেচা হয়ে থাকে।
মাল বিক্রি করতে না পারলে রাখা হয় পাশেই মোহাম্মদের গোডাউনে।
তাদের সাথে চান মিয়া, কাশেম, লুৎফরসহ এলাকার প্রভাবশালী আরো অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
জোকারচর এলাকায় রমজান ও আশরাফের নেতৃত্বে চোরাই মালগুলো বেচা কেনার কাজ চলে।
এছাড়াও জোকারচর ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে মোতালেবের নেতৃত্বে চোরাই মালামাল ক্রয় ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
আনালিয়াবাড়ি এলাকায় আসা চোরাই মাল ওঠানামার কাজ করা নজরুল ইসলাম ও মনতা নামের দুই শ্রমিক বলেন, এ ব্যবসাটা হচ্ছে জুয়ার মতো। জুয়ায় কখন লাভ হবে আর কখন ক্ষতি যাবে, সেটি যেমন বলা মুশকিল।
ঠিক তেমনি ঢাকা থেকে গাড়ি কখন আসে, সেটাও বলা মুশকিল। এই মালগুলো মোবাইলের মাধ্যমে আসে, আবার মোবাইলের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে যায়। আমরা শুধু মালামাল ওঠানামার কাজ করে থাকি।
কার কাছ থেকে মাল আসে, কে পৌঁছে দেয় ও কার কাছে বিক্রি করে তা কিছু বলতে পারবো না।
কয়েকজন সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী ও স্থানীয়রা জানান –
আলালিয়া বাড়ি এলাকার আজিজুল ইসলাম বলেন, আগে শুধু রাতে চোরাই মাল নামতো। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করার পর দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মালামাল বিক্রি করে থাকে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা ও কালিহাতী থানায় বার বার অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভাব করে চলে যায়।
জোকারচর এলাকার হাবিব বলেন, আশরাফ, রমজান ও মোতালেবসহ প্রভাবশালী আরো বেশ কয়েক জন্য ১৫-১৬ বছর যাবত এ ব্যবসার করে আসছে।
তার অল্প দিনে কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আনালিয়াবাড়ির মোহাম্মদ বলেন, আমরা শুধু রড, ভুট্টা ও ভূষি কিনে পরে অন্য পার্টির কাছে বিক্রি করে থাকি।
আমরা চার পাঁচ মাস যাবত এ ব্যবসা করছি। রমজানসহ ওরা ১৫-১৬ বছর যাবত ব্যবসা করে যাচ্ছে।
এ ব্যবসায় তাদের সাথে ৭-৮ জন জড়িত রয়েছে। মুলত রমজান ও আশরাফের নেতৃত্বে ব্যবসাটি পরিচালনা হয়ে থাকে।
যেদিন মাল বিক্রি না হয় সেদিন আমার গোডাউনে মালগুলো রাখা হয়। আমার গোডাউন আশরাফ ও রমজানের কাছে ভাড়া দেওয়া।
ইউপি সদস্য সোনা মিয়া বলেন, চোরাই ব্যবসার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ ব্যবসার বিষয়ে মোহাম্মদ ভালো বলতে পারবে।
জোকারচর এলাকার রমজান আলী বলেন, আমরা টাকা দিয়ে মাল কিনে বিক্রি করে থাকি। আমাদের এলাকার মোতালেব চোরাই ব্যবসা করে থাকে।
সে কয়েক বছর চোরাই ব্যবসা করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। ইতি মধ্যে তার বাড়িতে বিল্ডিং করেছে।
কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেনা না।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আইয়ুবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।