টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চরম হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্তত ৫০০ পরিবার। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে পানি বাড়লেও আষাঢ়ে তা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু যমুনার চিরায়ত রীতিতে পানি বাড়া-কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে নদীভাঙন।
প্রতিনিয়ত তীব্র ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা, ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেন নুরানি মাদ্রাসা, হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।
কাকুয়া ইউনিয়নের ঝাউগাড়া থেকে ওমরপুর দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। ফলে বহু মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৫৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা ও ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্তত ১৪-১৬ বার নদীভাঙনের কারণে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠান ওমরপুর গ্রামে অবস্থান করলেও সেখানেও ফের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
৯০ বছর বয়সী আমিরুল ইসলাম বলেন, “পাঁচবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন যেই বাড়িতে আছি, সেটিও ঝুঁকিতে। জমি নেই, আবার কোথায় যাবো?” একইভাবে স্থানীয় আবুল হোসেন জানান, “আমি ও আমার বাবা মিলে ১৩ বার নদীভাঙনে পড়েছি। এখন আর সরিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই।”
ওমরপুর গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী জানান, বিগত কয়েক দশকে পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, তেঁতুলিয়া, রশিদপুরসহ প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রাম যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাকুয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, “ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শত শত পরিবার ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে। দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার বলেন, “ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, “ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে এবং কাজ শুরু করা যাবে।”
ভাঙনরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যথায় যমুনার রাক্ষুসী থাবায় বিলীন হতে পারে আরও অনেক জনপদ।