আজ ২২ শ্রাবণ—বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যের আকাশে চিরজ্যোতিষ্ক এই মনীষী ১৯৪১ সালের এই দিনেই শ্রাবণের মেঘমালা ও বৃষ্টির মধ্য দিয়ে পাড়ি জমান না-ফেরার দেশে। তবে তিনি আজও রয়ে গেছেন—তার লেখা, সংগীত, চিত্রকলা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে।
রবীন্দ্রনাথ মানেই সত্য, সুন্দর ও চির নবীন সৃষ্টির প্রতীক। তাঁর কবিতা, গান, উপন্যাস ও নাটকে উঠে এসেছে মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা আর জীবনের দোলাচল। বাঙালির প্রতিটি প্রজন্মই খুঁজে পায় আশ্রয় তাঁর রচনায়।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ছিল তাঁর প্রিয় আবাস। জমিদারির সূত্রে এলেও, পূর্ববঙ্গের পদ্মা ও গড়াই নদীবিধৌত জনজীবন তাঁকে করে তোলে এ অঞ্চলের ভূমিপুত্র। সেই জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তাঁর বহু লেখায়।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সুরকার, প্রাবন্ধিক ও চিত্রশিল্পী—সব মিলিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টিশীল মানুষ। তাঁর সৃষ্টি শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্ব দরবারেও সমাদৃত।
তিনি লিখেছেন ২,২৩০টি গান, যার প্রতিটিতেই উঠে এসেছে ঋতু, প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম এবং মানবতা। ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৮টি নাটক, ৩৬টি প্রবন্ধ ও ৯৫টি ছোটগল্প তাঁর সৃষ্টির বিশাল ভান্ডারকে পূর্ণতা দিয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি চিত্রকলাকেও যুক্ত করেন নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন,
“আমরা যখন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি, তখন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের প্রেরণা। তাঁর গান আর কবিতাই আন্দোলনের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিল।”
তাঁর সৃষ্টিকর্ম আজও মানুষকে আলোকিত করে, ভাবতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়। তাই প্রতিবছর ২২ শ্রাবণ শুধু একজন কবির মৃত্যুদিন নয়, এক মহামানবের চিরন্তন জীবনের স্মারক দিন।
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলে গেছেন— ‘আমারে দেব না ভুলিতে’,
আর বাঙালিও ভুলেনি, ভুলবে না কখনও।