সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং - বললেন কর্মকর্তারা

লোডশেডিং সাবেক সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্র।। অভিযোগ গ্রাহকের

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে বিদ্যুতের লোডশেডিং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এতে বিদ্যুতের গ্রাহকরা ক্রমশই ফুঁসে উঠছে আর তৈরি হচ্ছে জনরোষ।

সারাদিন যেমন তেমন ঠিক সন্ধ্যার পর শহরের অধিকাংশ বিদ্যুতের এই লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সন্ধ্যার পর অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও লোডশেডিং তীব্র থেকে তীব্রতর হয় বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

আরো পড়ুন – ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের উপর পরিবহন শ্রমিকদের হামলা

সেক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ উঠেছে বিগত সরকারের অনুগত ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের দিকে।

গ্রাহকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদার চাইতে উৎপাদন বেশি বলে প্রচার করেছিল বিগত সরকার।

শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসে ঘোষনা বিগত সরকারের।

সেই সরকারর পতন হওয়ার সাথে সাথে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়াকে একটি ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করছে বিদ্যুতের গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ –

উপজেলার তারুটিয়া গ্রামের বাছিরণ নামের এক গৃহবধু জানায়,সকাল ৮টার পর থেকে বিদ্যুৎ চলে যায় আসে বিকাল ৫টায়।

এছাড়াও রাতে ৭-৮ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। মানুষ কিভাবে ঘুম আসবে, একটু ঘুম আসলে গরমে ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যায় বিদ্যুত নেই।

করটিয়া ইউনিয়নের মাদারজানি গ্রামের আলামিন মিয়া জানান, গত ৮-৯ দিন ধরে প্রচন্ড গরমের পাশাপশি ব্যপক লোডশেডিং হয়।

সারাদিন বিদ্যুৎ থাকেনা সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ আসে একটু ঘুমেরভাব আসলে গরমে যখন ঘুম ভেঙে গেলে দেখি বিদ্যুৎ নেই।

এ অবস্থায় রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। ফলে কাজকর্ম করতে নানা অসুবিদায় পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এমন লোডশেডিং আগে কখনো দেখিনাই। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

বিসিক শিল্প নগরী তারুটিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. ময়নাল হক জানান, আগস্ট মাসে লোডশেডিং হতো কিন্তু গত কয়েকদিন যাবত বেশি লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।

দিনের বেলায় বিদ্যুৎ তো থাকেই না রাতের বেলায়ও ৭-৮ বার লোডশেডিং হয়। এ গরমে কিভাবে মানুষ বাঁচবো?

তিনি আরো জানান, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ না থাকলেও এদিক সেদিক গাছতলায় বসে দিন পার করা যায়। কিন্তু রাতে তো সম্ভব না।

আরো পড়ুন – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাঁদাবাজির টাকা জমা রাখতো বড়মনি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উদ্যোক্ত জানান, আমার বাড়িতে ৫টি সেলাই মেশিন দিয়ে কাপড় সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করি।

দিনে বিদ্যুৎ না থাকায় আমি ও আমার কারিগররা কাপড় সেলাইও করতে পারে না, কাপড় ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে না পরলে টাকাও পাইনা।

কিন্তু আমার  ভাবে যে সংসার চলবে সেই চিন্তায় আছি।

ভিক্টোরিয়া রোডের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সারাদিন দোকানে থাকি বিদ্যুৎ ছাড়া, তারপর যখন বাসায় যাই, গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ নাই।

তারা বলেন, সারাদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু সন্ধ্যার পর যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়, তখন এতো লোডশেডিং কেন হবে।

এটা বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের চক্রান্ত। তারা বিগত সরকারের সময়ে নানান রকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, তাই তারা এখন আবার নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি –

জানা যায়, বর্তমানে বিউবো-১ এর আওতায় বর্তমান চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১২ মেগাওয়াট।

বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ-১ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু দিনে নয় রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এমন অভিযোগ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।

এদিকে তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।

এছাড়াও প্রচন্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় বৃদ্ধ ও শিশুরা।

তারা অতিরিক্ত গরমে ঘেমে জ্বর-কাশিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বক্তব্য – 

টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(বিউবো)-১ এর প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, বিক্রয় কেন্দ্র-১ আওতায় ৪৮ হাজার ৫শ গ্রাহক রয়েছে।

এখানে চাহিদা রয়েছে ২৪ মেগাওয়াট অথচ বরাদ্দ আসে ১০-১২ মেগাওয়াট।

এ ঘাটতি কিভাবে পুরণ করবো। তারপরেও যতটুকু সম্ভব গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

আরো পড়ুন – আহমেদ আজম একটি মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার। দাবি জেলা বিএনপি’র

অফিসে লোকবল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অফিসে লোকের প্রয়োজন ১০৩ জন রয়েছে ৩৯ জন।

এর মধ্যে মাত্র ১৪ জন মেকানিক্যাল রয়েছে। এতা অল্প মেকানিক্যাল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া কিভাবে সম্ভব,তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তবে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মন গড়া বলে উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।