নিজস্ব প্রতিবেদক : স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় ছোটভাইকে হত্যা করে গুম করার জন্য মাটিতে পুঁতে রাখেন বড় ভাই সোহেল।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পারখী গ্রামে।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইলের পিবিআই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
আরো পড়ুন – মির্জাপুরে পিকআপ ও সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪
বড় ভাই সোহেল বিদেশ যাওয়ার পর ছোট ভাই মুকুল তার (সোহেল) স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সোহেল বিদেশ থেকে ফেরার পরেও তার স্ত্রীকে মুকুল যৌন হয়রানী করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
এছাড়াও মুকুল মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরেন।
এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহেল ছোটভাই মুকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল হোসেনকে সাথে নিয়ে মুকুলকে হত্যা করে।
পরে তার লাশ ধান ক্ষেতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
মুকুল হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহেল (৩৪) এবং পরেশ চন্দ্র শীল (৪০) রোববার টাঙ্গাইলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।
সোহেল কালিহাতী উপজেলার পারখী গ্রামের মো. হানিফার ছেলে। পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল হোসেন (৪০) দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দর উপজেলার উত্তর দগর বাড়ি গ্রামের মৃত রমনীকান্ত শীলের ছেলে।
এদের দুইজনকে শনিবার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনের সদস্যরা ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে যা জানান পিবিআই কর্মকর্তা –
রোববার সকালে পিবিআই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন সংবাদ সম্মেলনে জানান, কালিহাতী উপজেলার পারখী গ্রামের মো. আবু হানিফার ছেলে মুকুল (২৪) নিখোঁজ হন।
পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভোরে পারখী চকপাড়ার ধান ক্ষেতে কাদা মাটিতে পুতে রাখা লাশের কিছু অংশ মানুষ দেখতে পায়।
খবর পেয়ে পচা ও গলিত লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে।
আরো পড়ুন – সাবেক কৃষিমন্ত্রীর আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কৃষি জমি দখল ও মাটি ভরাটের অভিযোগ
নিখোঁজ মুকুলের স্বজনরা তার পড়নের পোশাক দেখে লাশটি শনাক্ত করেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি মুকুলের স্ত্রী লিমা আক্তার (১৯) বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় টাঙ্গাইল পিবিআই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই টাঙ্গাইলের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী জানান, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে মুকুলের হত্যাকাণ্ডের সাথে তার বড় ভাই মো. সোহেল ও পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সন্দেহ হয়।
পরে শনিবার রাতে তাদের ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও সম্মত হন।
তারা জানান, ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আশুলিয়া থেকে কালিহাতী আসেন।
সেখান থেকে কোদাল সংগ্রহ করেন, পরে মুকুলকে জরুরী কথা আছে বলে পারখী মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে থাকতে বলেন।
পরে রাত ১১টার দিকে মুকুলকে তারা স্কুলের আধা কিলোমিটার উত্তরে বগা বিলের মধ্যে নিয়ে যান।
সেখানে গলায় মাফলার পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর পাশের একটি জমিতে কোদাল দিয়ে গর্ত করে মুকুলকে পুঁতে রাখা হয়।
আদালতে যা হয় –
রোববার বিকেলে তাদের টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। সেখানে মো. সোহেল ও পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নাজমুল জবানবন্দি দেন।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলের ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, থমথমে ক্যাম্পাস
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম মো. সোহেলের এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ পরেশ চন্দ্র শীলের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
পরে তাদের কারাগারে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেয়া হয়। দুইজনকে সন্ধ্যার সাতটার দিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।