সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে

টাঙ্গাইলের ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, থমথমে ক্যাম্পাস

সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

সেই সংঘর্ষে আহত সাধারণ শিক্ষার্থী সঠিক চিকিৎসা, সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদের পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন – তিনতলার ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয় এক ছাত্রকে

এতে তিনজন গুরুতর সহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

গুরুতর আহত সোহানকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল এবং রকিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীলের ৩০-৪০ জন অনুসারী মুখে গামছা বেঁধে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জননেতা আব্দুল মান্নান হলে প্রবেশ করে।

তারা তৃতীয় তলায় গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।

এসময় বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি শিক্ষার্থী সোহানুর রহমানকে বেধরক পেটায়।

তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে জয় ধর নামক অপর এক শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়।

এক পর্যায়ে হামলাকারীরা সোহানকে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। এতে সোহানের কোমর ও হাত-পা ভেঙে যায়।

তাকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে জননেতা আব্দুল মান্নান হলে হামলার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরের অনুসারীরা শেখ রাসেল হল থেকে মান্নান হলে ছুটে আসে।

এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী জয় ধর, সজিব শেখ, সৌরভ (১) ও সৌরভ (২) কে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরো পড়ুন –স্কুল শিক্ষিকা কাম ছাত্রলীগ নেত্রী শিলাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

সভাপতির অনুসারী রকি নামক এক শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অন্যান্য ঘটনা –

রাত ১টার দিকে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করে।

ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিসি টিভি ফুটেজ দেখার জন্য উপ-রেজিস্টারের কক্ষ সীলগালা করে রাখা হয়, যাতে কেউ ওই ফুটেজ নষ্ট বা ডিলিট করতে না পারে।

পরবর্তীতে ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টর বা তার প্রতিনিধিসহ সবার সামনে ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হবে।

পুলিশের বক্তব্য –

টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক তদন্ত সাদিকুর রহমান জানান, সভাপতি মানিক শীল ও তার অনুসারীদের রুম থেকে কিছু লোহার পাইপ ও দুটি চাপাতি উ্দ্ধার করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এব্যাপারে কোন মামলা হয় নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

মানববন্ধন কর্মসূচী –

বুধবার বিকেল ৩টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।

এতে বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের ছাত্র প্রভাষ দাস ও তাবরিজ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের মো. নাছিম, বিবিএ’র ছাত্র সাকিব প্রমুখ।

বক্তারা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

আরো পড়ুন – সাবেক কৃষিমন্ত্রীর আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কৃষি জমি দখল ও মাটি ভরাটের অভিযোগ

এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।

ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য –

এ ঘটনা প্রসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল বলেন, কি নিয়ে কি হলো তা বুঝতে পারছি না।

আমি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনার খবর পেয়ে তা থামানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পরিনি।

সাধারণ হুমায়ূন কবীর বলেন, এই হামলার ঘটনার পর থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

প্রক্টরের বক্তব্য –

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মীর মো. মোজাম্মেল হক জানান, এই ঘটনার বিষয়ে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভা হয়েছে। সেখানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।