নিজস্ব প্রতিবদক : টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম আসল বীর মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সখীপুর উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গিয়াস উদ্দিন।
সখীপুর উপজেলার নবগঠিত হতেয়া-রাজাবাড়ী ইউনিয়নের কেরানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে গত সোমবার এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গিয়াস উদ্দিন সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে গিয়াস উদ্দিনকে বলতে দেখা যায়, ‘সেদিন জহির মাস্টাররে বানাইছে সাক্ষী। তার কাছে কাটা রাইফেল না কী কী জানি জমা দিছাল।
আমার পরিষদে আইছাল, জহির মাস্টাররে কইলাম, স্যার, কবে কয়টা রাইফেল জমা দিছাল? কয়, থুইন ছেন দেহি।
আমি কইলাম, এ ব্যবসা কবে থিকা নইছেন। আমাদের সামনেও মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে।
কেউ তার কোনো প্রতিফল দিতে পারি নাই। কাজেই মুক্তিযুদ্ধে না যাইয়া মুক্তিযোদ্ধা? আর কেউ শরম না পাইলেন, আমি শরম পাইছি।’
২০২১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভ‚ক্ত হন সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম। গিয়াস উদ্দিনও একজন তালিকাভ‚ক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বক্তব্যের ভিডিওতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলছেন, ‘আমি যত দিন মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, মামুরে দেহি নাই।
এডার নিগা যদি দোজখেও দেয়, দোজখে গিয়েও শান্তি পামু। কারণ, এইটা আমি সত্য কথা বললাম।’ এ সময় মঞ্চে থাকা একজন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন, ‘গিয়াস ভাই যে বলল, মামু মুক্তিযোদ্ধা না। সেই মুক্তিযোদ্ধা কে? নাম কী?’
জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মামুডা হইল আমাদের বর্তমান মাননীয় এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম।
যাই হোক, ইডা মামুরেও দোষী না। আমাগোও দোষ আছে। সরকারেরও বদনাম আছে। যারা পথ দেখায়ছে, তারা দোষী।’
২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর ২০২১ সালে জোয়াহেরুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, জোয়াহেরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা রেখেছেন, এটা তাঁরা কোনো দিন দেখেননি বা শোনেননি।
জোয়াহেরুল ইসলাম নিজেও কখনো নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করতেন না।
সাংসদ জোয়াহেরের বক্তব্য –
ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা।
এর কোনো মানে হয় না। আমি গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হয়ে আমাকে ছোট করার জন্য এসব করছেন।’
সাবেক কমান্ডার ও অন্যান্যদের কথা –
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. ওসমান গনি বলেন, সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য অনলাইনে কোনো আবেদন করেননি।
২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সাক্ষাৎকার বোর্ডেও তিনি উপস্থিত হননি।
তিনি অবৈধ উপায়ে সংসদ সদস্যের ক্ষমতাবলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) তদবির করে ২০২১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভ‚ক্ত হন।
এ প্রসঙ্গে বাসাইলের হাবলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে জোয়াহেরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এমন কোনো তথ্য প্রমাণ তাঁর কাছে নেই।
ওই সময় তিনি কোনো কাটা রাইফেল জমা দেননি।
একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতার সাথে কথা হয় এই বিষয়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম কোন সেক্টর বা কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় বা কোন সেক্টরে না, বলো – কোন গ্রহে যুদ্ধ করেছেন উনি। সম্পাদনা – অলক কুমার