দীর্ঘদিন ধরে মন্দার কবলে পড়ে আছে দেশের পুঁজিবাজার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ১০ মাস পার হলেও কোনো নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় বাজারে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্থবির। বিএসইসির নেতৃত্ব পরিবর্তনের পরও বাজারে কোনো গতি ফেরেনি। বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২৪ সালের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় আইপিও প্রবাহ। নতুন কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি, বরং বাতিল হয়েছে ১৭টি আইপিও আবেদন—যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
আইপিও না থাকায় বিনিয়োগ সংকট
বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এক বছর আগে চারটি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ৬৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ছিল—এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও টেকনো ড্রাগস। এর পর থেকে নতুন কোনো অনুমোদন না আসায় প্রাথমিক পুঁজিবাজার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
প্রাইমারি মার্কেট বা প্রাথমিক পুঁজিবাজারে আইপিও না এলে কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, যার ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হয়। তবে এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে সেকেন্ডারি মার্কেট বা স্টক মার্কেটে, যেখানে প্রতিদিন শেয়ার লেনদেন হয়।
বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায়, বাজারে আস্থা নেই
বিনিয়োগকারীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় আস্থা ফিরে আসছে না। ডিএসই সূচক, লেনদেন, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তি—সবকিছুই নিম্নমুখী।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজারের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “শেয়ারবাজারের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বল্পকালীন সরকারের সময়ে বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় ভোগেন, ফলে নতুন বিনিয়োগ আসে না। বিনিয়োগ না এলে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করে না, ফলে আইপিওও আসে না। এই অবস্থায় বাজার থেকে ভালো রিটার্ন আশা করা অবান্তর।”
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থিতিশীল সরকার ও নীতিগত ধারাবাহিকতা ছাড়া পুঁজিবাজারে গতি ফেরানো কঠিন। বাজার চাঙ্গা করতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং নিয়মিত আইপিও অনুমোদনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।