নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে জেলা ইজতেমা আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই পক্ষ সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এক পক্ষ যখন ইজতেমার আয়োজন করছে, তখন সেটি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছে অন্য পক্ষ।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরের মোড়ে মোড়ে এবং আশেকপুর বাইপাস, ভাতকুড়া সহ বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও সংঘাত এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে রবি খাঁ’র পরিত্যাক্ত ইটভাটায় ইজতেমার আয়োজন করেছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা।
মাঠে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হবে এই ইজতেমা; শনিবার বাদ জোহর আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে ইজতেমা শেষ হওয়ার কথা।
কিন্তু ওই ইজতেমা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
বুধবার সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা ক্বওমি ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শামছুল হক কাসেমী।
এ সময় জেলা কওমি ওলামা পরিষদের সহসভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক মুফতি আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হাকিম, জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, টাঙ্গাইলের ভাতকুড়া এলাকার ইজতেমায় ইসলামের অপব্যাখ্যা করে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হবে।
তাদের অভিযোগ, গতকাল তাঁদের অনুসারীদের একটি জামাত ভাতকুড়া মসজিদে গেলে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি; উল্টো মারধর ও হুমকি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গোপালপুরের একটি বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আমিনুল হককে বিনা অপরাধে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রথমে গোপালপুর থানায় ও পরে মধুপুর থানায় ৬-৭ ঘণ্টা আটকে রাখে পুলিশ। এর তীব্র প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, ইজতেমা বন্ধের দাবিতে টাঙ্গাইল মারকাজ মসজিদের সামনে তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন।
সাদপন্থীর বক্তব্য –
সাদপন্থী ইজতেমা আয়োজক কমিটির খাদেম মুফতি মোস্তফা খলিল চৌধুরী বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
টাঙ্গাইলে বর্তমানে ১১টি বিদেশি জামাত এসেছে। এর মধ্যে সৌদি, চীন, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আইভেরি কোস্ট, মিয়ানমার ও আফ্রিকার জামাত আছে।
মুফতি মোস্তফা খলিল আরও বলেন, ‘আমাদের আয়োজন দেখে বিরোধী পক্ষ পাল্টা কর্মসূচি করার পাঁয়তারা করছে।
গত রোববার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই পক্ষকে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে ডাকা হয়েছিল। আমরা সেখানে উপস্থিত হলেও তাঁরা উপস্থিত হননি।
তাঁরা কোনো অনুষ্ঠান করলে আমরা বাধা দেব না। তাঁরা পুরোটাই হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রিত। আমাদের কিছু ভাই বিভ্রান্ত হয়ে ওই দিকে চলে গেছেন। তবে আমরা মূল ধারায় আছি।’
পুলিশ সুপারের বক্তব্য –
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, সাদপন্থীরা যে ইজতেমার আয়োজন করেছে, প্রশাসন তাঁদের সহায়তা করবে।
জুবায়েরপন্থীরা ইজতেমা বা ধর্মীয় সমাবেশ করলে তাঁদেরও সহায়তা করা হবে। তবে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না।
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।
কেউ শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার