নিজস্ব প্রতিবেদক : ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুটির জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) পিতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির নন।
শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
এই প্রতিবেদন আদালেত জমা হওয়ার খবরে টাঙ্গাইল জেলা রাজনীতিতে আবারো লেগেছে এক পলকা বাতাস।
সব মহলই জানার জন্য উৎসুক হয়ে আছে কে এই শিশুর পিতা? অফিস আদালত থেকে চায়ের স্টল, সবজায়গায় কথার ঝড়। একটাই প্রশ্ন, কে এই সন্তানের পিতা?
আরো পড়ুন – গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বড় মনি
অন্যদিকে, প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর সোমবার (৯ অক্টোবর) শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গোলাম কিবরিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদেশের পর গোলাম কিবরিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ জানান, কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুটির জৈবিক পিতা গোলাম কিবরিয়া নন বলে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসেছে।
আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
এর ফলে গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রইল। এখন তাঁর কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
মামলাটিতে গত ১১ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে গোলাম কিবরিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল।
আবেদনটি গত ১২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন।
ধর্ষণের মামলা করা কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে ২১ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
ধার্য তারিখে বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগ ডিএনএ পরীক্ষাসংক্রান্ত ১২ জুলাই চেম্বার বিচারপতির দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি ৯ অক্টোবর শুনানির জন্য তারিখ রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার শুনানি হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি। গোলাম কিবরিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, গোলাম সারোয়ার ও তারেক মো. বিন আসাদ।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য –
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি বলেন, আপিল বিভাগের আদেশের পর শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে আসে।
পরে প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করা হয়।
বড়মনির ছোট ভাই সাংসদ ছোট মনির বলেন –
গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই।
তিনি (গোলাম কিবরিয়া) জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিরও মহাসচিব।
ঘটনাক্রম –
উল্লেখ্য, এক কিশোরী বাদী হয়ে গত ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে।
গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও মামলায় আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে কিশোরী উল্লেখ করে, গোলাম কিবরিয়া তার আত্মীয় ও পূর্বপরিচিত।
সম্প্রতি পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কিশোরীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের বিষয়টি গোলাম কিবরিয়াকে জানানোর পর তিনি সমাধানের আশ্বাস দেন।
মামলায় কিশোরী অভিযোগ করে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়া শহরের আদালতপাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে তাকে (কিশোরী) ডেকে নেন।
সেখানে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন গোলাম কিবরিয়া।
পরে তাকে ধর্ষণ করে তার আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য গোলাম কিবরিয়া তাকে ভয়ভীতি দেখান।
আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে কিশোরী মামলায় অভিযোগ করে।