অনৈতিক সম্পর্কের বদনাম দিয়ে গৃহবধুকে তালাক; কাবিনও পাবেনা

বাসাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়েনর বালিয়া গ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের বদনাম দিয়ে এক গৃহবধুকে জোরপূর্বক তালাক করানো অভিযোগ উঠেছে।

আরো অভিযোগ উঠেছে ওই গৃহবধুর কাবিনের টাকা চাইতে পারবেন মর্মে কাজীর উপস্থিতিতে তালাকনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মোঃ রতন মিয়া (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে থ্রি-পিচের (মেয়েদের জামা) ব্যবসা করে আসছেন।

তার বাড়ি উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে।

তার শ্বশুর বাড়ি একই উপজেলার কাউলজানি ইউনিয়নের বাদিয়াজান গ্রামে।

সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বৃষ্টি নামের ওই গৃহবধূ এক হাজার টাকা বাকিতে একটি থ্রি-পিচ ক্রয় করেন।

সেই পাওনা এক হাজার টাকা চাইতে গিয়ে দুই লাখ ৩০ হজার টাকা টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে বিক্রেতা রতনকে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে স্থানীয় মাতাব্বরদের আয়োজনে উপজেলার বাদিয়াজান গ্রামের খালেক পীরের বাড়িতে শালিশি বৈঠকে এ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়।

একই সাথে ওই গৃহবধূর সাথে রতনের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় মাতাব্বররা।

পরে স্বামীকে দিয়ে ওই গৃহবধূকে তালাক দিতে বাধ্য করেন মাতাব্বররা।

স্থানীয়রা জানান, রোববার (১৮ অক্টোবর) রাত ৮টায় রতন নামের এক লোক গৃহবধূ বৃষ্টির ঘরে প্রবেশ করে।

পরে তারা টের পেয়ে রতনকে আটক করে। ঘটনাটি স্থানীয় মাতাব্বরদের জানানো হলে তারা পরদিন সকালে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন।

সালিশি বৈঠকে রতনকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়।

পরে গৃহবধূ তার কাতার প্রবাসী স্বামী রফিককে তালাক দেওয়ানো হয়।

এছাড়া কাবিনের তিন লাখ টাকা দাবি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক রতনের বাবা মোশারফ জরিমানার টাকা জোগারের জন্য মাতাব্বরদের কাছে এক মাস সময় চান।

কিন্তু মাতাব্বররা তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা দিতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেন।

একই সাথে গৃহবধূ বৃষ্টি তার স্বামীর কাছে কাবিনের তিন লাখ টাকা দাবি করতে পারবে না মর্মে সালিশি বৈঠকে স্থানীয় কাজীর উপস্থিতিতে তালাক নামায় স্বাক্ষর করান।

সালিশি বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন, ফুলকি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জামাল

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন (সারোয়ার)মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় মাতাব্বররা।

ভূক্তভোগীদের কথা –

রতন মিয়া জানান, বৃষ্টি নামের ওই গৃহবধূ সম্প্রতি তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা মূল্যের একটি থ্রী-পিচ বাকীতে ক্রয় করেন।

রোববার সকালে স্থানীয় বাজারে ওই গৃহবধূর কাছে তিনি পাওনা টাকা চান। এসময় তার কাছে টাকা না থাকায় সন্ধ্যায় বাসায় যেতে বলেন টাকার জন্য।

এ কারণে তিনি রাত আটটার দিকে ওই গৃহবধূর বাসায় যান টাকার জন্য।

টাকা নেওয়ার পরপরই গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে রতনকে মারপিট করে।

পরদিন শালিশি বৈঠকের মাধ্যকে রতনকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

গৃহবধূ বৃষ্টি জানান, রতন মিয়ার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি থ্রী-পিচের পাওনা এক হাজার টাকা নেওয়ার জন্য তার বাসায় এসেছিলেন।

ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রতন মিয়াকে তার পাওনা টাকা দেওয়ার সাথে সাথে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন রতন মিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

এসময় আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ডাকচিৎকার করতে থাকেন।

পরে স্থানীয় মাতাব্বররা এসে পরদিন সকালে শালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে যান।

সোমবার শালিশি বৈঠকের মাধ্যমে কাতার প্রবাসী স্বামী রফিককে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে তালাক দেওয়ানোর জন্যই শ্বশুরবাড়ির লোকজন অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেছেন।

পুলিশের কথা –

এ বিষয়ে বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রতনের বাবা মোশারফ হোসেন একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।