২ আগস্ট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২ আগস্ট মঙ্গলবার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

টাঙ্গাইলের কৃতিসন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট যুক্ত্ররাষ্ট্রে ইন্তেকাল করেন।

তিনি ওই সময় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের একটি সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান করছিলেন; তিনি ওই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পরলোকগমন করেন।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাংগাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।

আরো পড়ুন – একই প্রশ্নের নিয়োগ পরীক্ষায় টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ের সফলতা ও বিফলতার কাহিনী

তার পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন :

আবু সাঈদ চৌধুরী কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক (১৯৪০); কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভের পর ইংল্যান্ডের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন।

১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং ভারত বিভাগের পর ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন।

১৯৬০ সালে আবু সাঈদ চৌধুরী পূর্বপাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন।

তিনি পাকিস্তানের সাংবিধানিক কমিশনের সদস্য (১৯৬০-৬১) এবং বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের (১৯৬৩-৬৮) চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিচারপতি চৌধুরী ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন।

১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি উপাচার্য পদ থেকে ইস্তেফা দেন।

মুজিবনগর অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে তিনি লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন; একাজে তিনি বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন।

আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামি গ্রেপ্তার নাই

স্বাধীনতার পর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

ওই বছর ডিসেম্বর মাসে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হন।

১৯৭৫ সালের ৮ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রী ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হলে বিচারপতি চৌধুরী নতুন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের অবসান এবং তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৫ সালে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।

তাঁর রচিত প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি (১৯৯০) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত একটি মূল্যবান গ্রন্থ।

পারিবারিক জীবন :

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র আবুল হাসান চৌধুরী ও আবুল কাশেম চৌধুরী ১ কণ্যা শিরিন চৌধুরীসহ অগনিত ভক্ত অনুরাগী রেখে যান।

আরো পড়ুন – হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কি? শঙ্কায় নিহত শিহাবের পরিবার

পরবর্তী সময়ে তার প্রথম পুত্র আবুল হাসান চৌধুরী ২ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলেদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিবার, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে নাগবাড়ি চৌধুরী ষ্ট্রেট ও নাগবাড়ি হাসিনা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়াও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মারক ফাউন্ডেশন ঢাকায় কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানা গেছে।