হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কি? শঙ্কায় নিহত শিহাবের পরিবার

শিহাবের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সন্তানের হত্যাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি; প্রকৃত হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কিনা, সে বিষয়ে এখন সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।

আমরা কেন ঘুরবো? আইন আছে বিচার আছে, রাষ্ট্র আমাকে সঠিক বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেবে; আমাকে কেন শিশু সন্তান হত্যার বিচার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে?

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে বক্তব্যকালে অশ্রুশিক্ত চোখে আর আবেগাপ্লুত হয়ে এ কথা গুলো বলেন টাঙ্গাইল সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের ছাত্রাবাসে নিহত পঞ্চম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী শিহাব মিয়া বাবা প্রবাসী ইলিয়াস হোসেন।

আরো পড়ুন – প্রাণিসম্পদের মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিনে খামারির ১৪০০ হাঁসের মৃত্যুর অভিযোগ

শিশু সন্তান শিহাবের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পার হওয়াসহ মামলার একমাত্র গ্রেফতার হওয়া আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো এবং মামলার আর কোনা আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় এই বিচারহীনতার শঙ্কায় পরেছেন পরিবারটি।

এছাড়াও মামলার তদন্তের অগ্রগতি ও তদন্তকারীদের আচরণ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ শিহাবের পরিবার।

শিহাবের বাবার দাবি, বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিশু সন্তান সৃষ্টি স্কুলের আবাসিকে রেখে পড়ালেখা শিখতে পাঠিয়ে ছিলাম।

কি এমন অপরাধ ছিল যে কারণে আমার সন্তানকে হত্যার শিকার হতে হলো।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আসামীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। তবে এখনও তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

স্কুলের মালিকপক্ষ ধর্নাঢ্য ও প্রভাবশালী হওয়া ও তদন্তকারীদের আচরণে আমি এখন সন্তান হত্যার ঘটনায় প্রকৃত খুনী চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার হয়ে আইনের আওতায় আসবে কিনা, সেই শঙ্কায় আছি।

দ্রুত আসামী গ্রেপ্তার করে বিচা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিবাদ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

বক্তারা জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন; অন্যথায় কঠোর হুশিয়ারীও দিয়েছেন তারা।

আরো পড়ুন – ভূঞাপুর খাদ্য গুদামের চালে পাথর! রহস্য কি?

তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য – 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মডেল পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, হত্যা মামলা দায়েরের আগেই জড়িত সন্দেহে আমরা আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করকে আটক করি।

পরে মামলা দায়ের পর আদালতে তার সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আবাসিক শিক্ষক বক্করের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই চলছে; শিশু শিক্ষার্থী হত্যার রহস্য উদঘাটনে সর্বোচ্চ তৎপরতা রয়েছে।

মামলার অন্যান্য নামধারী আসামীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি জানান, মামলায় নাম আছে বলেই ঢালাও ভাবে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছেনা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিতিসহ কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ

আয়োজিত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুঈদ হাসান তরিৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত শিকদার, তানজীল আমীন শুভ, সৃষ্টি একাডেমিক শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া শ্যামন্তী প্রমুখ।

এ সময় নিহত শিশু শিহাবের মা ও হত্যা মামলার বাদি আছমা আক্তার, মেহেদী হাসান, ফারহান ইফতি নিঝুম, আব্দুল্লাহ বিন রাকাত, আফরিন জান্নাত, মাজেদুর সৌরভ, গোবিন্দ চাকী, আল আমিন শিকদার হিমু, ওয়ালিদ ভুইয়াসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনাক্রম –

গত ২০ জুন শহরের বিশ্বাস বেতকা সুপারি বাগান এলাকার সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের ছাত্রাবাস থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শিহাবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষকরা তার মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

নিহত শিহাব সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ী গ্রামের প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে। শিহাবকে চার মাস আগে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলে ভর্তি করা হয়।

জমি বিক্রয় নোটিশ

আরো পড়ুন – দেড় বছর পর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

সে সুপারি বাগান এলাকায় ওই স্কুলের একটি ছাত্রাবাসে সপ্তম তলায় থাকতো।

ওইদিনই শিহাবের মা আছমা আক্তার বাদি হয়ে আবু বক্করকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন; মামলায় অজ্ঞাত আরও সাত আট জনকে আসামী করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মর্গে শিহাবের ময়নাতদন্ত হয়। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল শিহাবের ময়না তদন্ত করেন।

গত রোববার টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান ময়না তদন্তের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, শিহাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

 এসময় তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

শিহাবের মরদেহ উদ্ধারের পর মৃত্যুর কারণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সৃষ্টি শিক্ষা পরিবারের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, পুলিশে আবেদন সাপেক্ষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকেলে শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শামসুল আলম ওই মামলায় স্কুলের আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

৩ জুলাই গ্রেফতার স্কুলের আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামি গ্রেপ্তার নাই

আজ বুধবার দুপুরেও শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে শিহাব হত্যার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে। সম্পাদনা – অলক কুমার