করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের মৃৎশিল্পীদের রঙ্গিন স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। চৈত্র ও বৈশাখ মাস জুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব মেলা ছিল, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সেসব মেলা সহ সব ধরনের উৎসব বন্ধ রয়েছে। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার মৃৎশিল্পীরা। ছাঁচদানির চাকা ঘুরছে না। রঙ তুলির ছোঁয়াও নেই। ভাটির (আগুনে পোড়ানোর চুলা) আগুন বন্ধ হয়েছে আরো আগে। প্রস্তুতিও নেই বৈশাখী মেলায় শো-পিচ, খেলনা সামগ্রীসহ নানা সব মাটির তৈজসপত্র বিক্রির। ধোয়া-মোছা কিংবা প্যাকেজিংয়ের টুং টাং শব্দটুকু না থাকায় সুনশান নিরবতা টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সহবতপুর ও গয়হাটার পালপাড়া।
জানা গেছে, বৈশাখী মেলা না থাকায় বন্ধ রয়েছে পালপাড়ার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প কারখানাগুলো। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এ সময় হাতের কারুকার্যে কাদামাটি দিয়ে তৈরী বাহারী সব পণ্যসামগ্রী তৈরী, ডিজাইন, রোদে শুকানো, রঙ করা আর প্যাকেজিং শেষে চলতো কেবল নির্ধারিত বাজারে পৌঁছানোর কাজ। কিন্তু করোনার প্রভাবে বৈশাখী মেলা বাতিল হওয়ায় ছোট বড় সকল মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততার পরিবর্তে সেখানে এখন কেবল মানবেতর জীবনযাপন। সরেজমিনে কারখানার আগুনে পোড়ানো ভাটির ছাই গন্ধ আর অলস ছাঁচদানির পাশে পরে থাকা ভেকুয়াপাক যন্ত্রে চটকানো মাটিসহ উঠোনের রোদে পড়ে থাকা কাঁচা মাটির তৈজষপত্রই চোখে পড়ে।
সহবতপুরের মৃৎশিল্পী কৃষ্ণ পাল সাংবাদিকদের জানান, জালের কাঠি, পুতুল, কলস, বাচ্চাদের খেলনা, রসের হাঁড়ি তৈরীর মতো হারিয়ে যাওয়া বাপ-দাদার পেশাকে পরিশ্রমের মাধ্যমে সমপোযোগী বিশ্বমানের আধুনিক পন্যের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন থমকে বসেছে এই মৃৎশিল্পীরা। মাটির বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ৭২টি পরিবার। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাড়তি লাভের তাগিদে কারখানাগুলোর শিল্পী ও শ্রমিকদের নিতে হতো বাড়তি চাপ। কারন এ সময়ের আয় দিয়ে আমাদের সারা বছর চলতে হয়। এখন আমরা বলতে পারবো না সামনে আমাদের জন্য কেমন দিন অপেক্ষা করছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ স্থানীয় গ্রামীন মেলা উপলক্ষে পুতুল, ঘোড়া, হাতি, টিয়াসহ মাটির তৈরী বিভিন্ন খেলনারও ছিলো চাহিদা। পহেলা বৈশাখের এসব মেলার আয়োজন বন্ধ হওয়ায় কারিগররা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নেই কোন ব্যস্ততা। উপরন্তু শ্রমিকদের অনেকেই করছেন মানবেতর জীবন যাপন।
রাম প্রসাদ পাল বলেন, প্লাস্টিকের কারণে এমনিতেই হুমকীর মুখে মৃৎশিল্প। তারপর আবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। শ্রমিক ও কারিগররা কৌশলী হওয়ায় বাজার টিকিয়ে রেখে পোড়ামাটির শিল্প প্লাস্টিক ও সিরামিকসকে কে চ্যালেঞ্জ করে টিকে রয়েছে। কিন্তু এখন কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা। করোনার মতো বৈশ্বিক বিপর্যয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি আমরা। অনেকের দুবেলা খাবার জোটানোই দায় হয়ে পড়েছে। করোনার এ সময়ে সরকারিভাবে নি¤œ আয়ের মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করলেও আমরা এ পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। করোনার প্রভাবে এবার পহেলা বৈশাখের মেলা বন্ধ হওয়ায় তৈজষপত্রে রঙ-তুলীর ছোঁয়া না লাগায় রুটিরোজগারেও বিরুপ প্রভাব পড়েছে পালপাড়ার এসব শ্রমিকদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় বৈশাখী উৎসব বন্ধ হওয়ায় নাগরপুরের ঐতিহ্যবাহী সহবতপুর ও গয়হাটার পালপাড়ার মৃৎশিল্পে প্রভাব পড়েছে। তবে কোন মানুষই অভূক্ত থাকতে পাড়ে না। মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।