আলামিনের ঘরে থাকা আট লাখ টাকার লোভেই সাত মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা লাকী বেগম ও তার চার বছরের মেয়েকে খুন করে রাইজ উদ্দিন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমুলি আদালত টাঙ্গাইল সদর এর আদালতে আসামি রাইজ উদ্দিন ১২ পৃষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
বিষয়টি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি-দক্ষিণ) এর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মো. সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাসুম এর টাঙ্গাইল সদর এর আমুলি আদালতে আসামি রাইজ উদ্দিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এসময় রাইজ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করে বর্ণনায় বলেন, আমি অনেক দিন যাবৎ আলামিনের সাথে থাকি। এরই মাঝে একদিন আমি ও আমার আরেক বন্ধু মিলে ওর বাড়ি থেকে আমি টাকাও নিয়ে আসি আর নানান ভাবে বিশ্বাস অর্জন করে টাকা রাখার জায়গা জেনে নেই। এর মধ্যে আমি জানতে পারি আলামিন ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংকে রাখবে। আর আমি সেই সুযোগ খুজতে থাকি কবে আলামিনের কাছে সেই টাকা আসবে। এর মধ্যেই জানতে পারি আলামিন টাকা এনে বাড়িতে রেখেছে।
এরপর ঘটনার দিন রাতে আলামিনের বাসায় গিয়ে ভাবিকে বলি, ভাবী আমাকে পুলিশ ধাওয়া করেছে। আমি দৌঁড়ে পালাইছি। আমাকে এক গ্লাস পানি দেন। ভাবী আমাকে পানি দিলে, পানি খেয়ে ভাবীকে বলি, দেখেন তো বাইরে পুলিশ আছে কিনা? ভাবী বাইরে বের হলে আমি তার গলায় চাকু দিয়ে পোচ মারি। তখন সে মাটিতে পড়ে গেলে তার উপর বসে আরো কয়েকবার চাকু দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করি। তখন তার মেয়ে বাইরে বের হয়ে আমাকে বলে, চাচু মাকে মাইরো না। তার মাকে মারার ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও মেরে ফেলি। তারপর টাকা নিয়ে পালিয়ে যাই।
ঘটনাটি রাইজ উদ্দিন পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক করেছেন বলেও সে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে টাঙ্গাইল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভাল্লুককান্দী গ্রামে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার চার বছরের শিশুকন্যাকে গলা কেটে হত্যা করে রাইজ উদ্দিন। এরপর তিনি পালিয়ে যাননি। তিনি সকলের সাথে মিশে সকলের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে থাকেন। তাছাড়া তিনি আলামিনকে নানা ভাবে সান্তনা দেন। ঘটনার রাতেই আলামিনের নানী শাশুড়ী ও মামা শ^শুড় বাড়ি থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। আলামিন রাতেই রাইজ উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দিলে সে ফোন ধরে নাই। পরের দিন সকালে আবার তাকে ফোন দিলে রিসিভ করে নাই। এতে সবার সন্দেহ হলে তারা ঘটনাটি ডিবি পুলিশকে জানায়। এরপর ডিবি পুলিশ তার দিকে লক্ষ্য রাখতে থাকে। একপর্যায়ে ঐ দিন বিকাল ৫টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর রাইজ উদ্দিন পুলিশের কাছে সকল ঘটনা খুলে বলে ও আদালতে জবানবন্দী দিতে রাজি হয়।
নিহত লাকীর বাবার বাড়ি সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে। ওই দিনই নিহত লাকির বাবা হাসমত আলী বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।