টাকা দিলে বাড়ি বানানো যায় সখীপুরের বনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে বনের মধ্যে ঘর-বাড়ি, টয়লেট নির্মাণ করা যায় টাঙ্গাইলের সখীপুরে। আর কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলে দালানও নির্মাণ করতে দেন বন কর্মকর্তারা।

বনবিভাগের জমিতে সামাজিক বনায়ন ছাড়া কোন কিছুই করার বিধান নেই।

তবুও টাঙ্গাইলের সখীপুরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিলছে বাড়ি বানানোর জমি।

আর সেই জমিতে আধা-পাকা ঘর বা দালান কিংবা টয়লেট করতে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

এ কারণে ওই উপজেলায় দিন দিন বন বিভাগের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

ঠিক বেদখল হচ্ছে না, বেদখল করা হচ্ছে। আর এই সুযোগে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের গাছ কেটে জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলছেন ঘর-বাড়ি।

সরেজমিন সখীপুর উপজেলার হতেয়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামের গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। দুর থেকে দেখে মনে হবে সুন্দর বন।

কিন্তু বনের একটু ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি।

শতশত নতুন নতুন টিনের ঘর আর দালানে ভরে গেছে পুরো বন। দেখলেই মনে হয় এ যেন নতুন একটি গ্রাম। সত্যই নতুন গ্রাম।

আর সেটা গড়ে উঠেছে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের মধ্যে।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা কিছু অসাধু বন কর্মকর্তার যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে জমিগুলো সামাজিক বনায়নের নামে দখলে নিয়ে সেখানে নির্মাণ করছেন বড়বড় দালান ও আধাপাকা ঘরবাড়ি।

এতে করে দখল হয়ে যাচ্ছে সামাজিক বনায়নের নামে লিজ দেয়া শতশত একর ভূমি।

সরেজমিনে যা দেখা যায় – 

বনের ভেতর চোখ যেতেই দেখা যায় নতুন টিনে তৈরি ঘর।

সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে থাকার ঘর ছাড়াও আধা-পাকা করে নির্মাণ করা হয়েছে গরুর খামার।

বাড়িতে অপরিচিত লোক এসেছেন দেখে এগিয়ে আসেন এক নারী।

বাড়িটি কার জিজ্ঞেস করলেই উত্তরে তিনি জানান, বাড়িটি তার স্বামীর। তার নাম আব্দুল লতিফ।

বন বিভাগের জায়গায় ঘর তুলেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, থাকার জায়গা নেই।

তাই এই জমিটি বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নেয়া হয়েছে।

আবার টয়লেট, রান্নাঘর, থাকার ঘর ও গোয়াল ঘরের জন্য আলাদা আলাদা টাকা দিতে হয়েছে। তা না হলেতো ঘর তুলতে দেয় না।

একই অবস্থা আব্দুল কাদের মোল্লা, জুলহাস মিয়া, আব্দুল জয়নাল মিয়ার বাড়ি। তারা বাড়ি করেছেন ৬/৭ মাস আগে।

তাদের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় তারা বন বিভাগের জমিতে নতুন টিনের ঘর তৈরি করেছেন।

এছাড়া পাশেই সমির সিকদারের বাড়ি। তার দখলে থাকা জমিতে রয়েছে তিনটি ঘর।

কিন্তু তিনি নতুন করে আধা-পাকা ঘর নির্মাণের জন্য বিট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করছেন বলে জানান।

১০০ গজ দূরেই চোখে পড়লো টিন সেড ভবন।

সেই বাড়ির মালিকের খোঁজ করতেই সামনে হাজির হন এক নারী।

তিনি জানান, এই ভবনের মালিক হান্নান মিয়া এবং তিনি তার স্বামী।

কিভাবে বন বিভাগের জমিতে ভবন করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি জমি নেওয়া থেকে ভবন নির্মানের শুরুতে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বিট কর্মকর্তাকে।

আরো টাকা চেয়েছেন কিন্তু তা দেয়া হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে টাকা দেয়ার পরই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো শেষ হয়নি।

স্থানীয় ও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য – 

স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে এভাবেই সরকারি জমি প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন।

আবার সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণও করছেন। এভাবে চলতে থাকলে পুরো বন উজার হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলার বাজাইল বিট কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম খান জানান, তিনি গত এক মাস আগে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে ঘর নির্মাণের বিষয়টি তিনি জানেন না। সম্পাদনা – অলক কুমার