টাঙ্গাইল পৌরসভায় প্রায় অর্ধেক কাউন্সিলর প্রার্থী হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি

বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এবার ৮৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদের মধ্যে ১৩ জন হত্যাসহ মোট ৩৪ জন বিভিন্ন সময় নানান অপরাধের সাথে যুক্ত থাকায় মামলার আসামি হয়েছেন।

মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেয়া হলফনামায় প্রার্থীরা নিজেরাই এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।

আর এই অবস্থাকে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।

মামলা রয়েছে যাদের : ১ নং ওয়ার্ড –

১ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর তানভীর হাসান ফেরদৌসের বর্তমানে কোন মামলা নেই; তবে আগে তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ ছয়টি মামলা হয়েছিল।

এই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী মোমিনুল হক খানের বিরুদ্ধে তিনটি এবং সেলিম সিকদার ও শাহিদুল ইসলাম করিরের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে।

২ নং ওয়ার্ড –

২ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং অপর প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধেও অস্ত্রসহ তিনটি মামলা ছিল। মামলাগুলো থেকে তারা খালাস পেয়েছেন।

৩ নং ওয়ার্ড –

৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর হেলাল ফকিরের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামার একটি মামলা এবং অপর প্রার্থী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা ছিল। উভয়ের মামলাই নিষ্পত্তি হয়েছে।

৪ নং ওয়ার্ড –

৪ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মীর মইনুল হক লিটনের বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি হত্যা মামলা রয়েছে; এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আগে একটি হত্যাসহ পাঁচটি সন্ত্রাসী মামলা ছিল।

এই ওয়ার্ডের প্রার্থী আনোয়ার সাদাৎ তানাকার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। আগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল।

৫ নং ওয়ার্ডের ছয়জন প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

৬ নং ওয়ার্ড –

৬ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর শফিকুল হক শামীমের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা দান ও সরকারি কর্মচারিদের মারপিটের একটি মামলা চলমান রয়েছে।

এছাড়া আগে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ছিল। তা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

৭ নং ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের কারো বিরুদ্ধে মামলা নেই।

৮ নং ওয়ার্ড –

৮ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল, তা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

এই ওয়ার্ডের প্রার্থী নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও বিদ্যুৎ আইনে একটি মামলা রয়েছে।

৯ নং ওয়ার্ড –

৯ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অতীতে একটি হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা ছিল। যা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

১০ নং ওয়ার্ডের তিনজন প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

১১ নং ওয়ার্ড –

১১ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলিমের বিরুদ্ধে একটি অগ্নিসংযোগের মামলা ছিল। যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

১২ নং ওয়ার্ড –

১২ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার ১০টি মামলা রয়েছে।

এই ওয়ার্ডের মুনসুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা চলমান ও অতীতের একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

অপর প্রার্থী শহীদ মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি সন্ত্রাসী মামলা বিচারাধীন, দুটি থেকে খালাস পেয়েছেন।

১৩ নং ওয়ার্ড –

১৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হযরত খানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি সন্ত্রাসী ছিল, যা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

এই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী সোহেল রানার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা রয়েছে।

১৪ নং ওয়ার্ডের তিনজন প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

১৫ নং ওয়ার্ড –

১৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল্লাহেল ওয়ারেছ হুমায়ুনের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি সন্ত্রাসী মামলা এবং অপর প্রার্থী শহীদুর রহমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ তিনটি মামলা ছিল। সবগুলো থেকেই তারা খালাস পেয়েছেন।

এই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আগে তার বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলা ছিল।

১৬ নং ওয়ার্ড – 

১৬ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি হত্যা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৭টি মামলা ছিল। সবগুলো থেকেই তিনি খালাস পেয়েছেন।

অপর প্রার্থী শাহ জনির বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ তিনটি মামলা ছিল। তিনিও সবগুলো থেকে খালাস পেয়েছেন।

১৭ নং ওয়ার্ড –

১৭ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর সাজ্জাদ আহমেদের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। আগেও তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ তিনটি মামলা ছিল। তা থেকে খালাস পেয়েছেন।

অপর প্রার্থী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি জোড়া খুনসহ সাতটি মামলা চলমান রয়েছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ ছয়টি মামলা ছিল, যা নিষ্পত্তি হয়েছে।

যৌতুকের কারণে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলার আসামি ছিলেন প্রার্থী কাজী মাহবুবুল করিম। যা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

১৮ নং ওয়ার্ড –

১৮ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আসাদুজ্জামান প্রিন্সের বিরুদ্ধে অতীতে একটি এবং সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি মামলা ছিল। মামলাগুলো থেকে তারা খালাস পেয়েছেন।

এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহ-সভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, দেশের রাজনীতির যে অবস্থা তার প্রতিফলন এখানে উঠে এসেছে। এসব মামলাগুলো সব যে রাজনৈতিক কারণে বা ষড়যন্ত্রমূলক হয়েছে তা বলে পার পাওয়া যাবে না।

নির্বাচনে শক্তি প্রয়োগের যে প্রবণতা দেখা যায়, তার ফলেই হয়তো বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তরা প্রার্থী হতে উৎসাহিত হচ্ছেন। সম্পাদনা – অলক কুমার