বাসাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের বাসাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ডাকপ্লেগ রোগের মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর রিপন সিকদার নামের এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার প্রায় ১৪০০ হাঁসের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রিপন সিকদার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত রিপন জেলার বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ময়থা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আইনগত সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে বেকার অবস্থায় থাকা যুবক রিপন সিকদার ৪২ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ঘর তৈরি করে হাঁসের খামার করেন।
আরো পড়ুন – ভূঞাপুর খাদ্য গুদামের চালে পাথর! রহস্য কি?
প্রথম অবস্থায় তিনি এক হাজার হাঁস নিয়ে খামার শুরু করেন। প্রথমে তার বেশ কিছু টাকা লাভ হয়।
এরপর দ্বিতীয়বারে তিনি নাগেশ্বরী জাতের ডিমের জন্য ১৭৩০টি হাঁসের বাচ্চা ও মাংসের জন্য বেলজিয়াম জাতের ৭০টিসহ মোট ১৮০০টি হাঁসের বাচ্চা খামারে তুলেন।
বাচ্চাগুলোর এক মাস বয়সে গত ৫ জুন রিপন সিকদার বাসাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিনের দাঁয়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) জাহিরুল ইসলামের কাছে ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিনের জন্য যান।
ওই সময় জাহিরুল ইসলাম তাকে ১৯টি ভ্যাকসিনের বোতল দেন। এরপর ৭ জুন রিপন হাঁসগুলোকে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের একদিন পর থেকে হাঁসগুলো মারা যেতে থাকে; আর ক্রমেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েকদিনের ভেতরে প্রায় ১৪০০ হাঁসের মৃত্যু হয়।
ওই সময় ভ্যাকসিনের বোতল চেক করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ২০ মে ভ্যাকসিনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব নদী পাড়ের শত শত পরিবার
ভূক্তভোগীদের উদ্যোক্তা পরিবারের বক্তব্য –
রিপনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাসকিন আনার পর প্রায় ১৭০০ হাঁসকে প্রয়োগ করা হয়; আর বাকিহাঁসগুলোকে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেরদিন থেকে হাঁস মারা যাওয়া শুরু হয়। একদিনেই প্রায় ৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়; এভাবেই বাড়িতেই প্রায় ১৪০০ হাঁস মারা যায়।
এরপর বাকি প্রায় ৪০০ হাঁসকে বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেও হাঁস মারা যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে এই খামারটি করেছিলাম। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’
ক্ষতিগ্রস্ত রিপন সিকদার বলেন, ‘গত ৫ জুন আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিনের দাঁয়িত্বে থাকা জাহিরুল ইসলামের কাছে হাঁসের ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন আনতে যাই; তিনি আমাকে ১৯টি ভ্যাকসিনের বোতল দেন।
এরপর আমি ৭ জুন প্রায় ১৭০০ হাঁসকে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি; ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেরদিন থেকে হাসগুলো মারা যেতে শুরু করে। একদিনে ৫০০ হাঁসের ওপরেও মারা গেছে।
এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ১৪০০ হাঁস মারা গেছে। মৃত হাঁসগুলো মাটিতে পুতে রাখা হয়। আর বাকি জীবিত হাঁসগুলো বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোও মারা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাঁসগুলো মারা যেতে থাকলে ভ্যাকসিনের বোতল চেক করে দেখি প্রায় এক মাস আগে ভ্যাকসিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ
জাহিরুল ইসলামের ভুলের কারনে আামার প্রায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার পর আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গেলে জাহিরুল ইসলাম জানায়, তার ভুল হয়েছে।
ঋণ নিয়ে আমি এই হাঁসের খামারটি করেছি। এই ক্ষতি আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে।
এই ক্ষতি পোষানোর মতো আমার ক্ষমতা নেই। তাই আমি ক্ষতিপূরণ চাচ্ছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য –
স্থানীয় বাসিন্দা শামছুল হক বলেন, ‘রিপন ঋণ করে এই খামারটি করেছিল; প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তার ভুলের কারনে রিপনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে; অভিযুক্ত কর্মকর্তার শাস্তি ও পাশাপাশি রিপনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।’
ইউপি সদস্য সুমন সরকার জামাল বলেন, ‘একজন কর্মকর্তার ভুলের কারনে রিপনের ১৪০০ থেকে ১৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রিপনের অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেলো। এলাকাবাসী হিসেবে রিপনের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামি গ্রেপ্তার নাই
প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) অভিযুক্ত জাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘রিপন নামের ওই ছেলেটা আমার কাছে গত ৬ জুন এসেছিল।
পরে তাকে ২০টি ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। কয়েকটি হাঁস মারা যাওয়ার পর রিপন আমার কাছে এসে ১০টি ভ্যাকসিন ফেরত দিয়ে গেছে।
পরে চেক করে দেখি ২০ মে ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই ভ্যাকসিনমূলে আমাদের অফিসে থাকা বাকিগুলো ফেলে দিয়েছি।
হঠাৎ করে আবার এসে বলতেছে, তার ১৪০০ হাঁস মারা গেছে। ভ্যাকসিনের মেয়াদ না থাকলেও উপকার না হতে পারে; তবে কোনও ক্ষতি হবে না।
আসলে এতগুলো ভ্যাকসিনের মধ্যে থেকে তাকে দেওয়ার সময় আমি মেয়াদটি খেয়াল করিনি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্র্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এখানে এসেই হাঁসগুলোর মৃত্যুর ঘটনাটি জেনেছি।
মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন বিতরণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভুক্তভোগীকে প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রানা মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কোনও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার