ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিল ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত অভিবাসীদের প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে (সিআরএ) ৯০ দিনের বেশি সময় আটকে রাখার বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দেওয়া ঐতিহাসিক রায়ে আদালত জানায়, গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত বা জননিরাপত্তার হুমকি হিসেবে গণ্য অভিবাসীদের জন্য ২১০ দিন পর্যন্ত আটক রাখার নতুন বিধানটি ফরাসি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পরিপন্থি।
বামপন্থী আইনপ্রণেতাদের আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি সংবিধানিক কাউন্সিলের বিচারাধীন আসে। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে, নতুন বিধানের আওতায় এমন অভিবাসীরাও পড়তেন যারা সাজা ভোগ শেষে মুক্তি পেয়েছেন এবং আর কোনো সক্রিয় হুমকি নয়। বর্তমানে ফ্রান্সে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য ২১০ দিনের পর্যন্ত আটক রাখা যায়।
নতুন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ, হত্যা, সহিংসতা, চুরি ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও একই আটকের মেয়াদ প্রযোজ্য হতো।
মানবাধিকার সংস্থা লা সিমাদ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি কঠোর ও অকার্যকর নিরাপত্তানীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল ফানেলি কারে-কন্তে বলেন, “কারো স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
অন্যদিকে, ডানপন্থী রাজনীতিকরা রায়টিকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রক্ষণশীল এলআর দলের নেতা লরো ওয়াকিয়েজ অভিযোগ করেন, “ফ্রান্সে যেখানে ৯০ দিনের বেশি আটক সম্ভব নয়, সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অভিবাসীদের ১৮ মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়।”
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো প্রথম থেকেই ২১০ দিনের আটকাদেশের পক্ষে ছিলেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালে প্যারিসে এক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডে মরক্কোর এক নাগরিকের সম্পৃক্ততা প্রকাশের পর, যিনি কয়েক বছর জেল খেটেও দেশে অবস্থান করছিলেন, সেই ঘটনার পর তিনি আইন কঠোর করার দাবি তোলেন। যদিও সংবিধানিক কাউন্সিল নতুন আইনের অনেক ধারা বাতিল করেছে, কিছু বিধান এখনও বহাল রয়েছে।
২০২৪ সালে ফ্রান্সের ২৫টি সিআরএ-তে মোট ৪০,৫৯২ জন অভিবাসী আটক হন, যা আগের বছরের ৪৬,৯৫৫ থেকে কম। গড়ে প্রতি অভিবাসী ৩৩ দিন পর্যন্ত আটক ছিল।
১৯৯৩ সালে ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের ১০ দিনের জন্য আটক রাখার বিধান চালু হয়, যা ২০১৮ সালে বাড়িয়ে ৯০ দিন করা হয় এবং সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২১০ দিন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।