মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় যোগদানের মাত্র এক বছরে বিভিন্ন কর্মকান্ড ও আর্তমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতিমধ্যে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। সৎ-সাহস ও সদিচ্ছা থাকলে একদিন কঠিন কাজেও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে তার কর্মকান্ডে এমন প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে জনগণ আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে খুঁজে নিয়েছেন এই ইউএনওকে।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী তারিখে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজান। উদ্যোগ নেন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে একটি আধুনিক জনপদ গড়ে তোলার। তার সততা ও কর্মদক্ষতায় ক্রমান্বয়ে বদলে গেছে উপজেলা প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। এক কথায় বলা যায় ঘাটাইলে তিনিই শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এ উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। শান্তির লক্ষ্যে তিনি গণশুনানির মাধ্যমে পারিবারিক কলহ-বিবাদ, জমি-জমা, রাস্তা-ঘাটসংক্রান্ত অসংখ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করে জনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তার কার্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত দ্বার হিসেবে খুলে রেখেছেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আদালত পর্যন্ত আর যেতে হচ্ছে না কাউকে।
প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখল প্রতিরোধে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছেন ইউএনও কামরুল ইসলাম। ফলে জোড়দিঘী, ঘাটাইল পৌরসভা, হামিদপুর বাজারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদপূর্বক বাজারের জমি পুনরুদ্ধার এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও পাবলিক প্যালেসে প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রতিমাসে তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। গাঁজা/মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে হুলিয়া জারি করেছেন। তিনি যুবসমাজকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। ৩০টির অধিক বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন। এক কথায় সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদচারণা।
ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম দাপ্তরিক কাজের বাইরে সকাল-বিকাল ছুটে বেড়ান ঘাটাইলে সব প্রান্তে। কথা বলেন সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে এবং শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। নিয়মিত খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারিত থাকলেও জনগণের সেবার কারণে প্রয়োজনে সন্ধ্যার পর রাত অবধি অফিস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাপ্ত ২০০টি অসহায় পরিবারকে নিজ তত্ত্বাবধানে মানসম্মত ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন।
উপজেলা চত্বরের মসজিদ, মন্দিরসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন তিনি। কাবিখা, টিআর প্রকল্পগুলো সরেজমিনে গিয়ে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত দেখে অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও। তার নজরদারির ফলে পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় নকলমুক্ত পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রের ব্যাপক প্রসার করেছেন।
তিনি ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ রাস্তা পাকাকরণ, শিশুপার্ক সংস্কার, চুরি বন্ধে মসজিদ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্যানেলসহ সোলার লাইট স্থাপন, উপজেলা পুকুরের চারপাশের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে চলার পথসহ ক্যাম্পাসটিকে শরীরচর্চায় প্রাতঃভ্রমণ, বিনোদন ও অবকাশের জন্য একটি আধুনিক ক্যাম্পাসে পরিণত করেছেন।
নিজ উদ্যোগে গরিব, অসহায় ও অবহেলিত মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। ঘাটাইল উপজেলা মাঠ প্রশাসন কর্মে যার বিশেষ অবদান এই ইউএনও মোঃ কামরুল ইসলাম । তার অবদান উপজেলায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এর স্ত্রী ডাঃ নাফিস ফাতেমা আশা। তিনি এ্যাপেলো হাসপাতাল, ঢাকার জেনারেল পেডিয়াট্রিক্স রেজিস্ট্রার বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। তার রয়েছে দুটি কন্যা সন্তান। তিনি কেবল একজন সফল ইউএনও নন, বরং তিনি একজন আদর্শ স্বামী ও বাবা।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে ঘাটাইলে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বাক-প্রতিবন্ধি শিশু, অটিষ্টিক শিশুসহ বিভিন্ন মানুষের মাঝে আর্থিক অনুদানসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও এবারের প্রচন্ড শীতে গরীব ও অসহায় মানুষদের মাঝে তিনি কম্বল বিতরণ করেছেন। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জনগোষ্ঠীর অভিভাবক হয়ে ওঠা অনেক ইউএনও’র পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু তিনি পেরেছেন। সবার মধ্যে হয়ে ওঠা আজ এক অসাধারণ গল্পের মানুষ তিনি। ঘাটাইল উপজেলায় জনবান্ধব প্রশাসন গড়ায় আজ রাজনৈতিকসহ সর্ব মহলে তিনি প্রশংসিত।
এ বিষয়ে ঘাটাইল আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মোঃ শাহজাহান বলেন, এত ভালো ইউএনও ঘাটাইলে অতীতে দেখিনি। তিনি অসহায় এবং গরিব মানুষের প্রকৃত বন্ধু। অন্যায় এবং অসৎ ব্যক্তিদের কখনো প্রশ্রয় দেয়নি। যার কারণে সাধারণ মানুষ ইউএনও স্যারের ওপর আস্থা পেয়েছেন। উপজেলা পরিষদকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছেন তিনি। এক কথায় তিনি একজন সততা এবং কর্মদক্ষতার প্রতীক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, সত্যি কথা বলতে কি আমাদের চাকরির নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই, সুনির্দিষ্ট কোনো পরিধি নেই, জনগণকে সেবা দেয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছকে বাধা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের মঙ্গল হয়, ভালো হয় সেটাই করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, এমপি স্যার, জেলা প্রশাসক স্যার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক সহযোহিতায় প্রতিটি কাজ করা সহজ হয়েছে বলে আশা করি। প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতায় প্রতিটি সেক্টরের সমন্বয়ে প্রান্তিক জনগণের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ঘাটাইল বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব করবে।
তিনি আরও বলেন, আমার ইচ্ছা রয়েছে ঘাটাইলে বিনোদনের জন্য একটি পার্কের ব্যবস্থা করা এবং সেই সাথে সাগরদিঘীকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। যদি জনপ্রতিনিধি এবং জনগণ আমাকে এ কাজে সহায়তা করে আমি তা বাস্তবায়ন করব ইনশা আল্লাহ ।