অলক কুমার : টাঙ্গাইলের বাসাইলে নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে বাসাইল-সখীপুর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়ক ব্যবহারকারী এবং এই এলাকার বাসিন্দারা।
শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইল থেকে আসা সখীপুরগামী সকল ধরনের যানবাহন আটকিয়ে দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
পরে সেই যানবাহনগুলো ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও চালকরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃহৎ আয়োজনের কারণে সামান্য ভোগান্তি মেনে নিতে হবে।
জানা গেছে, বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মালেক মিঞা স্মৃতি নৌকা বাইচ বাসাইলের বাসুলিয়ায় (চাপড়া বিল) দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়।
আরো পড়ুন – প্রেমিকাকে সন্তুষ্ট করতে না পেরে খুন হন প্রেমিক, আদালতে স্বীকারোক্তি
এজন্য সকাল থেকেই যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
এতে বাসাইল থেকে সখীপুর সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়।
টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল দিয়ে সখীপুর যাওয়া যানবাহনকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকেই ঘুরিয়ে দেয়া হয়।
অপরদিকে সখীপুর থেকে টাঙ্গাইলগামী যানবাহনগুলো পুনরায় সখীপুরের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকরা। যেখানে সখীপুর থেকে বাসাইলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
সেখানে সখীপুর যেতে পরিবহনগুলোকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে যেতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন – হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
ভূক্তভোগীদের বক্তব্য –
শিবলী নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘টাঙ্গাইল থেকে মোটরসাইকেলযোগে জরুরি কাজে সুন্যাতে যাচ্ছি; বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
একটি নৌকা বাইচের কারণে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়ক বন্ধ থাকায় হাজার হাজার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই কাজটি ঠিক হয়নি।’
সুজন নামের এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, ‘আমি বগুড়া থেকে নলুয়ার যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। বাসাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেই আমার গাড়িটি আটকিয়ে দেয়া হয়।
এখন মির্জাপুরের গোড়াই হয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ঘুরে নলুয়া যেতে হবে। যেখানে বিশ কিলোমিটার সড়ক বাসাইল হতে সখীপুর পর্যন্ত। সড়কে যাতায়াত বন্ধ করে এটা কেমন বিনোদন।
রিপন নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল থেকে জরুরি কাজে সখীপুরে যাচ্ছি। কিন্তু নৌকা বাইচের কারনে বাসাইল বাসস্ট্যান্ডেই আমাকে আটকিয়ে দিয়েছে।
বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না রেখে সড়ক বন্ধ করায় হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা : প্রতিষ্ঠাতা রিপনের ফাঁসির দাবিতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক শাহাদত বলেন, ভাড়া করা সিএনজি চালাই। এতে দিন শেষে মহাজনকে ৫শ’ টাকা দিতে হয় জমা।
কিন্তু সকাল থেকেই সখীপুর-বাসাইল সড়ক বন্ধ। সিএনজি চালাতে না পারায় উপার্জনও হচ্ছে না।’
বাসাইলের আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ফারুক বলেন, হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে এই নৌকা বাইচের কারণে।
তিনি আরো বলেন, নৌকা বাইচটি অন্যত্র আয়োজন করলে মানুষের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
আয়োজক ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
বাসাইল বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর মো. শফি বলেন, বড় একটি আয়োজনের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিনোদনের জন্য একটু দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এবিষয়ে উধ্বর্তন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
নৌকা বাইচ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সোহেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরো পড়ুন – হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কি? শঙ্কায় নিহত শিহাবের পরিবার
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে।
এতে সড়কে পরিবহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এতে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরী পরিবহনগুলোকে শুধু ছাড়া হচ্ছে।
এবিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘হাজার হাজার লোকজন নৌকা বাইচ দেখতে আসে; এটি ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ।
যারা সখীপুর-বাসাইল আসা যাওয়া করবে নিয়মিত লোকজন তারা জানে এই দিনে এই অবস্থা ঘটে।
এতে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষে হাজার হাজার লোকজনকে নৌকা বাইচ দেখতে বিরত রাখার কোন উপায় নেই।
আমরাও সেখানে যাচ্ছি, আমাদের গাড়িও সেখানে যেতে পারছে না। আমাদেরও নৌকায় বিকল্প পথে যেতে হবে। সেখানে পুলিশ সুপারও যাবেন।
যাদের বেশি দরকার তারা নৌকা দিয়ে ঘুরে ফিরে যাবে। এই দিনটির কথা সবাই জানে।’ সম্পাদনা – অলক কুমার