সখীপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ফাইল্যা পাগলের মেলা

সখীপুর প্রতিনিধি : সখীপুরে সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলছে ফাইল্যা পাগলার মেলা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন মেলাটি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলেও হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলে দলে মাজার প্রাঙ্গণে সমবেত হন।

ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে মেলা প্রাঙ্গণকে মুখর করে তুলেছেন তাঁরা। তবে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম বালাই নেই।

শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে এমন চিত্র।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

সরেজমিন আরও দেখা যায়, প্রতিবছরের মতো মাজার প্রাঙ্গণে এবারও মানতকারীদের ভিড়।

ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে মাজারের চারদিকে ঘুরছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।

মেলায় আসা অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই। এ ছাড়া গত বছরগুলোর মতো এবার মেলায় পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

মাজারের পাশে দূরদূরান্ত হতে আশা পাগলদের আস্তানায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক কেনাবেচা ও সেবন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শনার্থী জানান, গত শুক্রবার পুলিশ এসে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছে; কিন্তু কে শোনে কার কথা, মেলা চলছে তার নিজস্ব গতিতে।

মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক দোকানদার বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে দোকানের ভিটা ভাড়া নিয়েছি। এখন মেলা বন্ধ করে আমাদের উঠিয়ে দেওয়া হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’

টাঙ্গাইল থেকে আসা ইব্রাহীম মিয়া নামের এক মানতকারী বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে হওয়ার পর মানত করেছিলাম আল্লাহ যদি আমাকে ছেলে সন্তান দান করেন, তবে আমি ফাইল্যা পাগলার মাজারে গিয়ে একটি খাসি জবাই দেব।

আল্লাহ আমার আশা পূরণ করেছেন। তাই আজকে ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। সরকারি বিধিনিষেধ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –

মেলা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি শাইফুল ইসলাম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করেছি।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মানতকারীদের আগমন বন্ধ করা যায়নি। মেলার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তবে মানতকারীরা তাঁদের মানত পূরণ করে মাজার জিয়ারত শেষে সুশৃঙ্খলভাবে ফিরে যাচ্ছেন।’

উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য –

এ বিষয়ে ইউএনও চিত্রা শিকারী বলেন, ইতিমধ্যে মেলা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মানতকারীরা আবেগের জায়গা থেকে হয়তো মেলায় আসছেন।

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টির প্রতি সবারই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তবে মেলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে ফালুচান শাহর মাজারকে ঘিরে ৭২ বছর ধরে মেলাটি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

লোকমুখে মেলাটি ফাইল্যা পাগলার মেলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। প্রতিদিন দূর-দূরান্তর থেকে হাজারো লোক মানত করা মোরগ, খাসি, গরু, মোমবাতিসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসে লালমাটির পাহাড়ি এলাকা দাড়িয়াপুরকে এক মিলন কেন্দ্রে পরিণত করেন।

মেলায় হিন্দু, মুসলমানসহ নানা শ্রেণি-পেশার উৎসুক জনতা অংশগ্রহণ করেন। তবে এবার মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সম্পাদনা – অলক কুমার