সাংস্কৃতিক নগরী টাঙ্গাইলে পালিত হয়নি নায়ক মান্নার মৃত্যু বার্ষিকী

সাংস্কৃতিক নগরি উপধিতে ভূষিত টাঙ্গাইলে পালিত হয়নি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা নায়ক মান্নার মৃত্যু বার্ষিকী। মৃত্যুর এক যুগ অতিবাহিত হলেও জন্মভ‚মি টাঙ্গাইলে নায়ক মান্নার নামে নেই কোন প্রতিষ্ঠান, স্মৃতি ফলক বা সড়ক। ভক্ত ও পরিবারের দাবি, নায়ক মান্নার স্মৃতিকে অ¤øান করে রাখতে প্রয়োজন উদ্যোগ।

নায়ক মান্না শায়িত আছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার নিজ বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার ১২তম মৃত্যু বার্ষিকীতে জন্মস্থানে কোন কর্মসূচি দেখা যায়নি। জন্মস্থানে নীরবে মান্নার মৃত্যু বার্ষিকী চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভক্তরা।

সরেজমিনে মান্নার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যু বার্ষিকীর এক যুগ স্মরণে নেই কোন কর্মসূচি। ভক্তরা মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে এসে কবর জিয়ারত করছেন। অনেকে আবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দুফোঁটা চোখের জল ঝরাচ্ছেন। তারা এক যুগ পূর্তিতে নায়ক মান্নার স্মরণমূলক কোন কর্মসূচি এখানে না দেখে চরম ব্যথিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল থেকে বাই সাইকেল চালিয়ে মান্নার কবর দেখতে এসেছেন শুভ আহমেদ নাদিম নামের এক ভক্ত। সে শাহ্জালাল ম্যাটস এর প্রথম বর্ষের ছাত্র। মান্না সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় আবেগি কণ্ঠে শুভ বলেন, আমার বোঝার পর থেকে আমি মান্নার সিনেমা দেখতে দেখতে তার ভক্ত হয়ে গেছি। আজ মৃত্যু বার্ষিকীতে এখানে কিছুই হচ্ছে না। এত বড় মাপের মানুষের সমাধিস্থল এভাবে থাকতে পারেনা। আমি খুব ব্যথিত।

কামরুল ইসলাম নামের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া আরেক ভক্ত এসেছেন মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন নায়ক মান্না দেশের একজন কৃতি সন্তান। তার কবর অযতেœ পড়ে আছে। আমি কবরের সংস্কার করার দাবী জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, টাঙ্গাইলের স্থানীয়ভাবে সামজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মান্নার মৃত্যু ও জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি করা উচিত ।

কালিহাতীর দেউপুর গ্রামের কবির তালুকদার নামের আরেক ভক্ত বলেন, আমি হাজার হাজার মানুষের ভীড় ঠেলে অনেক কষ্ট করে তার কবরে মাটি দিয়েছিলাম। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময় প্রায়ই কবর দেখে যাই। স্থানীয়ভাবে কমিটি কিংবা স্মৃতি সংসদ করে মান্নার কর্ম বাঁচিয়ে রাখা উচিত।

মান্নাদের পারিবারিক বাড়ীর কেয়ারটেকার আদর আলী বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মান্নার কবর একবার দেখার জন্য অনেক লোক আসেন। তার স্ত্রী ও পুত্র এখানে বেশি আসেন না। সব ভক্তই এসে মান্নার কবর সংস্কার করার দাবী জানান।

মান্নার ফুফু চামেলী বেগম বলেন, মান্নার বাবার নাম নুরুল ইসলাম তালুকদার ও মাতা হাসনা বেগম। তাঁরা দুই ভাই, দুই বোন। এর মধ্যে একমাত্র কনা নামের এক বোন জীবিত আছেন। তিনি মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিছুদিন আগে এসে কবর জিয়ারত ও এতিমদের খাবার পরিবেশন করেন। মান্নার ছেলে সিয়াম তালুকদার আমেরিকায় থাকেন এবং স্ত্রী বিমানে চাকরি করেন।

চামেলী বেগম আরো বলেন, মান্না বাংলাদেশের কৃতি সন্তান হলেও তার জন্ম টাঙ্গাইলে। তাই টাঙ্গাইলে মান্নার নামে কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং সড়কের নামকরণ করা হউক। সেইসাথে তার কর্মময় স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয়-জাতীয় পর্যায়ে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে আরো উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল চিত্রনায়ক এসএম আসলাম তালুকদার মান্না সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন। তার অভিনীত প্রথম চলচিত্র তওবা। এরপর একের পর এক ব্যবসা সফল চলচিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনে গড়ে তুলেন নিজের শক্ত ভীত। সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে তিনি প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার সিনেমায় বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের কথা উঠে এসেছে। জীবদ্দশায় অনেক সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। সে কারণে বাংলা সিনেমার দর্শক আজও মনে ঠাঁই দিয়ে রেখেছেন মান্নাকে।

মান্নার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সিপাহী’, ‘যন্ত্রণা’, ‘অমর’, ‘পাগলী’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘জনতার বাদশা’, ‘লাল বাদশা’, ‘আম্মাজান’, ‘দেশ দরদী’ জেদী, ধর, মাতৃভূমি ইত্যাদি।

আসলাম তালুকদার মান্না ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চলে যান।