আকমলের তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা আপিলে কমে অর্ধেকে নেমে আসার পর কানেরিয়ার পুরোনো ক্ষোভ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সফলতম টেস্ট স্পিনার টুইটারে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই তাকে আলাদা চোখে দেখা হচ্ছে।
“ জিরো টলারেন্স নীতি প্রযোজ্য কেবল দানিশ কানেরিয়ার জন্যই, অন্যদের জন্য নয়। কেউ কি উত্তর দিতে পারবেন, কেবল আমাকেই কেন আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, অন্যদের নয়? জাতি, বর্ণ ও ক্ষমতার দাপট বিবেচনা করেই কি নীতির প্রয়োগ করা হয়? আমি একজন হিন্দু ও তা নিয়ে গর্বিত। এটিই আমার পরিচয়, আমার ধর্ম।”
ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার সময় স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১২ সালে কানেরিয়াকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয় ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি হেরে যান। পরে ইংল্যান্ডের বোর্ডের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও (পিসিবি)।
সম্প্রতি কানেরিয়া বলেছেন, সৌরভ গাঙ্গুলি আইসিসির সভাপতি হলেই তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করবেন। তার ধারণা, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে সৌরভ বুঝবেন সার্বিক বাস্তবতা।
পিসিবির কাছ থেকে ন্যায্য বিচার পাচ্ছেন না বলেও নানা সময়ে প্রকাশ্যে বলে আসছেন কানেরিয়া। বেশ কবারই অভিযোগ করেছেন, মুসলিম প্রধান দেশে একজন হিন্দু বলেই তিনি অন্যায়ের শিকার।
টুইটারে ক্ষোভ জানানার পর ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অভিযোগ আরও বিস্তারিত তুলে ধরেছেন কানেরিয়া।
“ বলা হয়, দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি মানা হচ্ছে। উমর (আকমল) তো দোষী প্রমাণিত হয়েছে, তার পরও ওর সাজা অর্ধেক কমানো হয়েছে। এখানে তো তারা ঠিকই সহানুভূতি দেখিয়েছে। আমির, আসিফ, সালমান বাটদেরও ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমাকে কেন এই সুযোগের বাইরে রাখা হলো?”
“ আমাকে কেন একইরকম সহানুভূতি দেখানো হলো না? তারা বলেন যে আমি শুধু ধর্ম নিয়ে অভিযোগ করি। কিন্তু বৈষম্য যখন এতটা স্পষ্ট, তখন আর কী বলার থাকে! আমি তো সাধারণ যুক্তি দিয়েই কথা বলছি।”
বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আরও কিছু প্রশ্ন করেছেন কানেরিয়া।
“ উমর (আকমল) তার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় শৃঙ্খলাজনিত কারণে বিতর্কে জড়িয়েছে। তার মতো একজন মানুষ সহানুভূতি পেলে আমি কেন পাব না? সে কি কাউকে ঘুষ দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছে?”
“ তারা বলেন, আমি ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি। বলুন তো, আমার পরে কোন হিন্দু ক্রিকেটার পাকিস্তানের হয়ে খেলেছে? একজনও নয়। এতগুলো বছরে একজনও ভালো হিন্দু ক্রিকেটার তারা পায়নি, বিশ্বাস করা কঠিন।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কানেরিয়ার বারংবার দাবির প্রেক্ষিতে পিসিবি অবশ্য আগেই বলেছে, তাদের কিছুই করার নেই, সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে কেবল ইসিবি। আপিল করতে হবে ইংল্যান্ডের বোর্ডের কাছেই।
২০১০ সালে পাকিস্তানের হয়ে শেষবার খেলেছেন কানেরিয়া। প্রায় ১০ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৬১ ম্যাচে নিয়েছেন ২৬১ উইকেট। পাকিস্তানের দ্বিতীয় সফলতম স্পিনার আব্দুল কাদির ২৩৬ উইকেট নিয়েছেন ৬৭ টেস্টে।
উমর আকমল নিষিদ্ধ হয়েছেন পাকিস্তান সুপার লিগে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েও তা কতৃপক্ষকে না জানানোয়। শুরুতে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও আপিলে তা কমে এসেছে দেড় বছরে।
সূত্র: https://bangla.bdnews24.com/