নিজস্ব প্রতিবেদক : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন হাজতখানায় হাজতির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপস্থিতিতে মরদেহটি ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরে তিনি মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
তবে হাজতখানার ভেতরে রশি কোথা থেকে এলো এ নিয়ে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানায় লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় এসব কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইল জাতির জনকের বিকৃত ভাস্কর্যটি অপসারণ; প্রতিস্থাপিত হয়নি নয় মাসেও
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, লেবু মিয়াকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে, আর পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত লেবু মিয়া বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় আট বছর আগে সখিনা বেগম (৪৩) নামে নারীর সঙ্গে বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমানের (৪৭) বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।
এরপর থেকে তিনি একই গ্রামে আলাদা বাড়ি তৈরি করে দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় প্রবাসী ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে ওই বড়িতে থাকতেন তিনি। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সখিনা বাড়িতে একা ছিলেন।
এরপর সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি ঘুম থেকে না ওঠায় পাশের বাড়ির লোকজন খোঁজ করতে গিয়ে তার লাশ দেখতে পান।
খবর পেয়ে মির্জাপুরের বাঁশতৈল ফাঁড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সখিনার পরিবারের দাবি তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সখিনার ভাই বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।
সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সখিনা বেগমের সাবেক স্বামী বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমান (৪৭) এবং প্রতিবেশী লেবু মিয়াকে আটক করে পুলিশ।
পরদিন মঙ্গলবার ভোরে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানার ভেতর থেকে লেবু মিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে এলাকাবাসী সখীপুর-গোড়াই সড়কের বাঁশতৈল এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের বক্তব্য –
মৃত লেবু মিয়ার স্ত্রী আলিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। রাতে তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বাঁশতৈল ফাঁড়ির এসআই সেলিম তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়।
এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।’
প্রশাসনের বক্তব্য –
বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাখাওয়াত হোসেন জানান, ফাঁড়িতে কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
আরো পড়ুন – বাসাইলের রিসোর্ট নিয়ে সেই সংবাদের জন্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, হাজতখানার ভেতরে ভ্যান্টিলেটারের সঙ্গে সাদা রঙের নাইলনের রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় লেবু মিয়ার মরদেহ দেখা যায়।
তবে নিহতের গলায় রশির কালো দাগ ছাড়া শরীরে অন্য কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। সম্পাদনা – অলক কুমার