নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ঐক্যের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে, যে কোন মূল্যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এ ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন হয়েছিল কোন অবস্থায় এরকম একটি স্বৈরশাসক কখনো যেন বাংলাদেশে ফিরে না আসে, তার জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা সাড়ে ১৫ বছর আগে যে আন্দোলন সুচনা করেছিলাম তার পরিসমাপ্তি টেনেছে ছাত্র-যুবসমাজ-জনতা।
আরো পড়ুন – স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। প্রেতাত্মারা এখনো ঘোরাফেরা করছে
আন্দোলনে কোন দলমত নাই। এখানে সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহন করেছে মারা গেছে।
শহীদদের আমরা কোন দলের সম্পত্তি বানাতে চাইনা। শহীদরা একেকজন জাতীয় বীর।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যোনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সাথে জামায়াতের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন এ দেশের শত্রুরা জানে- জামায়াতে ইসলামী ভাঙবে, কিন্তু মচকাবে না। অন্যায়ের উপর মাথা নত করবে না।
দেশের স্বার্থ কারো কাছে বিক্রি করতে রাজি হবে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছু পা হবে না।
টানা ১৭ বছর ৬ মাস এই জাতি বন্দীত্বের নিঘরে বন্দী ছিল। মানুষের মুখে ছিল তালা, হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ, পায়ে ছিল ব্যারি।
এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম এবং রাস্তায় যে ভাইটি ভিক্ষা করতেন তিনিও মজলুম। কারণ ওই সমস্ত ভিক্ষুকদেরকে চাঁদা দিতে হতো গুন্ডাদের কাছে।
চাঁদা না দিলে তারা ভিক্ষা করতে পারতে না। ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় কিনতে হতো। এভাবে প্রত্যেকটি মানুষ ছিল জুলুমের শিকার।
সভায় তিনি আরো বলেন –
এই সাড়ে ১৭টি বছর বাংলাদেশের জনগণের জীবনে ছিল দুঃসহ কালোরাত। আপনার বলবেন, এই সাড়ে ১৭ বছর কিভাবে মিলে।
আওয়ামী লীগ তো সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। আসলে তারা সাড়ে ১৭ বছর ছিল।
তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে লগি-বৈঠার তান্ডব চালিয়ে শ’খানেক মানুষকে তারা হত্যা করেছিল।
আরো পড়ুন – পদ্মা সেতু মনে হয় শেখ হাসিনার বাবার টাকায় করেছিলো
ফ্যাসিবাদের সূত্রপাত তখনি হয়েছিল। স্বৈরাচারের প্রদধ্বনি তখন থেকেই এসেছিল।
তারপরে আপনারা দেখেছেন ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পরে তারা রাষ্ট্রের গর্বিত প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর কবে আঘাত দিয়েছিল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন- পিলখানা সদর দপ্তরে ৫৪ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে।
পরিবারের মহিলা সদস্যদের নির্যাতন, লাঞ্ছিত করেছে। তারপরে তাদের হত্যা করে ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছে।
সেই হত্যাকান্ডের বিচার আজও হয়নি।
অথচ সে সময়ে সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি।
একই সাথে আরেকটি গর্বের বাহিনী সীমান্তের অতীন্দ্রিয় প্রহরী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে।
তাদের ১৫ হাজার সদস্যের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ মানুষ তারা নিহত হয়েছে। কুচক্রকারীদের কারণে চক্রান্তে এসব মানুষদের বলি দিতে হয়েছে।
শেখ হাসিনার আমলের নির্যাতনের ভয়াবহতা বর্ণনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন- তাদের আমলে ঘরে ঘরে হাহাকার, আমি অনেক যুবককে জেলে দেখেছি; বিয়ে করে ছয় মাসের মাথায় গ্রেপ্তার হতে হয়েছে।
তার স্ত্রী ১, ২ ও ৩ বছর অপেক্ষা করেছে। জেলের ভেতর থেকে বলে দিয়ে তুমি আর আমার জন্য অপেক্ষা করো না।
তুমি মুক্ত, তুমি চলে যাও, তোমার একটা জীবন আছে। আমি কোনদিন মুক্তি পাব জানি না। ঘরে ঘরে হাহাকার।
এরপরই তারা আঘাতটা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর। দেশপ্রমিক এই পরীক্ষিত শক্তির উপর।
আরো যারা বক্তব্য দেন –
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, টাঙ্গাইল শহর শাখার সভাপতি মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
আরো পড়ুন – লোডশেডিং সাবেক সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্র।। অভিযোগ গ্রাহকের
এসময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক, নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে সভাস্থল টাঙ্গাইলের পৌর উদ্যানে সমবেত হন।
দুপুরের পর থেকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে কর্মীদের ঢল নেমে যায়।
পরে বিকালে সভাপতির বক্তব্য প্রদানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের আমীর আহসান হাবিব মাসুদ।