নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর নেতা আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে এবার স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন (৫৬) বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
টাঙ্গাইল আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম মামলাটি গ্রহণ করেন।
তিনি সাড়ে চার বছর আগের এ ঘটনার বিষয়ে কোনো মামলা বা তদন্ত হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি টাঙ্গাইলের আদালত পুলিশের পরিদর্শক তানভীর আহমেদ নিশ্চিত করেছেন। এতদিন কাউন্সিলর মোর্শেদের ভয়ে মামলার সাহস পাননি বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী।
মামলায় মোর্শেদ ছাড়াও আরও আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
তাঁরা হচ্ছেন, শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার মুন্সী তারেক পটন (৪৯); পারভেজ খান ওরফে রনি (৩৬); সোহেল ওরফে বাবু (২৭); অন্তর সূত্রধর (২৭); মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সুমা ওরফে মনা (৪৫); মুন্সী তারেক পটনের স্ত্রী লিনা (৪০); রাফসান (২৮) ও আয়নাল মিয়া (৪৫)।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোর্শেদকে গত বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে।
পরে তাঁর বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে পুলিশ।
গত শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোর্শেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত সোমবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলায় বিবরণী –
মামলায় বাদী সৈয়দ শরিফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, মোর্শেদের বাসার পাশে তিনি পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন।
২০১২ সালের জুন মাসে তাঁর মেয়ে সৈয়দ আমেনাকে মোর্শেদের লোকজন অপহরণ করেন। পরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে মোর্শেদ আমেনাকে বিয়ে করেন।
কিছুদিন পর জোর করে নিকাহ রেজিস্ট্রারের বালাম বই থেকে মোর্শেদ তাঁদের কাবিননামা ছিঁড়ে ফেলে দেন।
তাঁদের সংসারে ছয় বছরের এক মেয়েও রয়েছে। দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারে মাঝেমধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়।
২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে ওই এলাকার এক বাসায় দাওয়াতের কথা বলে মোর্শেদ আমেনাকে নিয়ে যান।
সেখানে নিয়ে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় মোর্শেদ তাঁকে হত্যা করে লাশ গুম করেন। এতদিন মোর্শেদের ভয়ে মামলা করতে সাহস পাননি বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য –
টাঙ্গাইল সদর থানা সূত্র জানায়, মোর্শেদের বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোর্শেদ টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন।
২০১৩ সালে ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সম্পাদনা – অলক কুমার