নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে নিখোঁজ হওয়ার চার মাসেও উদ্ধার হয়নি মিরা খাতুন (৩২) নামের এক এনজিও কর্মী।
ফলে তার স্বামী ও দুই শিশুপুত্রসহ পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিরাজ করছে কষ্ট, ক্ষোভ আর আতঙ্ক; যতই দিন যাচ্ছে স্বজনকে ফিরে না পাবার শঙ্কা ভর করছে তাদের উপর।
ঘটনার বিবরণ –
জানা গেছে, সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিসের জৈষ্ঠ মাঠকর্মী মিরা খাতুন ভুয়াপুুর উপজেলায় ফলদা শাখায় কর্মরত ছিলেন।
গত ২০ নভেম্বর প্রতিদিনের মত কর্মস্থল থেকে কিস্তি আদায়ের জন্যে বের হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বামী মো. রাজিব মিয়া মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কিস্তি আদায় শেষে প্রতিদিনের মত বেলা তিনটার দিকে অফিসে ফেরার কথা; কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অফিসে ফিরে না আসায় সহকর্মীরা খোঁজ নিতে শুরু করে।
কিস্তি আদায়ের স্থানগুলোতেও খবর নেয়া হয় অফিস থেকে। কিন্তু হদিস পাওয়া যায়না। সহকর্মীদের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে স্বামী রাজিব মিয়া তার কর্মস্থল নারায়নগঞ্জ থেকে ভুয়াপুরে চলে আসে।
এরপর পরিবারের সদস্যসহ স্বামী রাজিব মিয়া আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নেয়। সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খুঁজে মিরা খাতুনকে কোথায় পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় গত ২০ নভেম্বর সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিস (এসএসএস) ফলদা শাখার ম্যানেজার বন্যা আক্তার ভুয়াপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ মিরা খাতুনের স্বামী মো. রাজিব মিয়া বাদি ভুয়াপুর থানায় অজ্ঞাত আসামী দিয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ –
মামলা বিবরণে জানা যায়, ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ি থেকে চন্ডিপুর যাবার পথে যে কোন স্থান থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা মিরা খাতুনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে।
মিরা খাতুনকে ফিরে পেতে ইতিপুর্বে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় পরিবাবের পক্ষ থেকে।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে মিরা খাতুনের মা হোসনে আরা বেগম জানান, প্রায় দেড় বছর আগে তার মেয়ে ওই এনজিওতে মাঠ সংগঠক হিসেবে চাকুরী নেন।
সর্বশেষ ভুয়াপুর উপজেলায় ফলদা শাখায় কর্মরত ছিল। গত ২০ নভেম্বর ফলদা শাখা থেকে চন্ডিপুর ও হিন্দুপাড়ায় কিস্তি আদায় করার জন্য রওনা দেয়ার পর থেকেই তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।
লিখিত বক্তব্যে হোসনে আরা বেগম আরো জানান, পুলিশকে সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম দেয়া হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
যেদিন থেকে তার মেয়ে নিখোঁজ হন সেদিন থেকেই ওই এলাকার বেশ কিছু লোক গা ঢাকা দেয়।
তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে নাকি খুন করা হয়েছে তা খুজে বের করার জন্যে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়ের দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। একজন চতুর্থ শ্রেনী এবং আরেক জন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ালেখা করছে।
ছেলেরা মায়ের জন্যে সব সময়ই কান্না করে। তাদের স্বান্তনা দেযার ভাষা নেই আমাদের।
স্বামীর বক্তব্য –
এ ব্যাপারে মামলার বাদি ও মিনা খাতুনের স্বামী রাজিব মিয়া জানান, থানায় মামলা করার পর প্রায় চার মাস কেটে গেছে।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ মিরাকে উদ্ধার করতে পারেনি। আমরা পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা এখনো বিভিন্নভাবে খোঁজ করছি।
কিন্ত এখনো পর্যন্ত কোন কুল কিনারা হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে আমাদের মধ্যে মিরাকে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।
তিনি জানান, পুলিশকে গোপনে কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম জানানো হয়েছে। কিন্ত তারপরেও কোন অগ্রগতি হচ্ছেনা।
পুলিশের বক্তব্য –
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুল ইসলাম জানান, আমরা আপ্রান চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন সূত্র খুঁজে পাচ্ছিনা।
বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নিখোঁজ ওই নারীর সাথে কারো কোন প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়না। বাদিপক্ষ থেকে কিছু সন্দেহভাজন কিছু মানুষের নাম দেয়া হয়েছিল।
তাদের বিষয়েও যাচাই বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। সম্পাদনা – অলক কুমার