টাঙ্গাইলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ধর্ষিতার বাচ্চা প্রসব, পরে মৃত্যু

ধর্ষিতার বাচ্চা প্রসব

দেলদুয়ার প্রতিবেদক : গ্রাম্য শালিসে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে উঠাবে এমন আশ্বাস দিলেও কিছু গ্রাম্য মাতাব্বরদের প্ররোচনায় গা ঢাকা দিয়েছে ধর্ষক।

পরবর্তীতে প্রতিবন্ধীর বাবা বাদী হয়ে টাঙ্গাইল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘদিনেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের আদেশ দেন।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কৈজুরী গ্রামের হতদরিদ্র এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে ফুঁসলিয়ে গত বছর জুলাই মাসের দিকে শারীরিক মিলন করে পাশের গ্রাম শুভকির মৃত ছালাম মিয়ার ছেলে দুই সন্তানের জনক অটোচালক আলাল মিয়া।

আদালতে অভিযোগ সূত্রে জানা –

জানা যায়, পাশাপাশি বাড়ি ঘর হওয়ার সুবাদে ওই প্রতিবন্ধীর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আলালের। আলাল বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক হওয়ায় তার পরিবার বিষয়টি কোন সন্দেহের চোখে দেখেনি তারা।

সেই সুযোগে আলাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে মিলামেশা করতো। পরবর্তীতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।

খবরবাংলা

এ ঘটনা জানাজানি হলে ধর্ষিতার পিতা স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ মিয়ার কাছে বিষয়টি জানায়।

পরবর্তীতে স্থানীয় মাতাব্বর আজমত আলী, প্রিষ্টালী খান, আছর আলী, আরিফ ও আনোয়ার মিলিটারীসহ সকলে বসে গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে দোষী আলাল মিয়া তার দোষ স্বীকার করে বিচার মেনে নেয়।

শালিসী রায় –

শালিসে রায় হয় যে, ধর্ষক আলাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে দুই লাখ টাকা কাবিনমূলে বিবাহ করবে এবং তার নামে এক শতাংশ জমি লিখে দিবে ও সন্তান প্রসবের খরচ হিসেবে মেয়ের বাবাকে ৭০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করবে।

এ রায় মেনে এক সপ্তাহের সময় নিয়ে কয়েকজন মাতাব্বরের কু-পরামর্শে আত্মগোপনে চলে যায় আলাল।

পরে এ ঘটনায় প্রতিবন্ধীর বাবা বাদী হয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন।

মামলায় ধর্ষণকারী আলালসহ ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। আদালত মামলাটি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তদন্তের আদেশ দেন।

খবর বাংলা

এর মধ্যে গত ৮ এপ্রিল প্রসব ব্যথা উঠলে মেয়েটিকে টাঙ্গাইল মা ও স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়; সেখানে সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করেন ওই প্রতিবন্ধী নারী; জন্মের ছয় দিন পর বাচ্চাটি মারা যায়।

তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য – 

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, মামলার বাদীর অসহযোগিতার কারণে মামলার তেমন অগ্রগতি করতে পারিনি।

ভিকটিমকে কয়েকবার নিয়ে আসতে বলেছিল মেডিকেল করার জন্য কিন্ত তার অভিভাবক তাকে নিয়ে আসেননি।

মেয়েটি যখন বাচ্চা প্রসব করেছে তাও আমাকে জানাননি এবং বাচ্চাটির মৃত্যুর খবরও আমাকে জানাননি ধর্ষিতার পরিবার।

তিনি আরো জানান, এখন মৃত বাচ্চাটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পরে ধর্ষিতা ও অভিযুক্ত আলালের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা সংযুক্ত করে কোর্টে চুড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার