সারাবিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে জনসমাগম বন্ধ, লকডাউন, ট্রেনসহ সকল প্রকার গণ পরিবহণ বন্ধ, বিমান চলাচল বন্ধ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন; আর মানুষ যখন ঘরে বসে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তায় চিন্তিত; তখন আরেকদিকে চলছে এক ধরণের উৎসব। করোনা উৎসব। মানে কিছু মানুষ নিজেদের জাহিরী করতে নানারকম ভাবে তৈরি করছে জনসমাগম। করোনাকে উৎসব বানিয়ে সেই উৎসবে যোগ দিচ্ছে সবাই মিলে, সামাজিক দূরত্বের কথা ভুলে।
এই সকল কর্মকান্ডকে ভবিষ্যতের (বেঁচে থাকলে) পাথেয় হিসেবে রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, যেখানে করোনা প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব। সেখানে মাস্ক বিতরণ, হাত ধোঁয়া, শোধন কার্যক্রম, খাদ্য বিতরণের নামে বিভিন্ন জনসমাগম তৈরি করে সামাজিক দূরত্ব কমিয়ে আনা হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি।
তারা আরো বলছেন, এসব কাজও করতে হবে তবে সেটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। কোনভাবেই সামাজিক দূরত্ব কমানো যাবে না। পাশাপাশি মানুষকে ঘরের বাইরে আকর্ষণ করে, সেরকম কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। করলেই বিপদ মহামারী আকার ধারণ করবে। আর সেই মহামারীতে কত মানুষের মৃত্যু হবে তা কেউ ধারণা করতে পারবে না।
আর এই জন সমাগম তৈরিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে কিছু জনপ্রতিনিধি। যেমন- টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার হেলাল ফকির। তিনি নিজের লোকজন নিয়ে জন্মদিন, মাস্ক বিতরণ নামে বেশ কয়েকটি জনসমাবেশ করেছেন গত ৩/৪ দিনে। “হেলাল ফকির সমর্থক গোষ্ঠী” ও ঘঁৎঁষরংষধস ঝঁহধ নামক দুটি ফেসবুক আইডি থেকে এই সকল অনুষ্ঠানের ছবি প্রতিনিয়ত পোস্ট করা হচ্ছে। এতে দেখা যায়, কাউন্সিলার হেলাল ফকির একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারী কোন নির্দেশনা মানছেন না। এতে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করছেন চিকিৎসক ও সচেতন মহল।
এরকম হেলাল ফকিরদের মতো জনপ্রতিনিধিরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন উর্ধ্বতনদের দেখে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার বলেন, আমরা তো প্রতিনিয়ত আমাদের এলাকায় সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতেছি, কিন্তু এত লোক সমাগম করে নয়। এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে সরকার নির্দেশনা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধুঁতে হবে।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল নাগরিক কমিটির মীর মেহেদী বলেন, করোনাকে জয় করতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বিকল্প নাই। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? জনপ্রতিনিধি, জন প্রশাসনের কর্মকর্তা যারা এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, তাদেরও দেখি একঝাঁক লোকজন নিয়ে কখনো মাস্ক দিচ্ছে, কখনো স্প্রে করছে আবার কখনো খাবার বিতরণ করছে, কখনো জনগণকে সচেতন করছেন। সাথে থাকছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এতে করে সামাজিক দূরত্ব কমে যাচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে।
এবিষয়ে ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও কবি বুলবুল খান মাহবুব বলেন, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে দেশের সব মেগা প্রকল্পে চীনের লোক কাজ করছে। প্রথমত যে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, তা হয় নাই। কিন্তু তার পরেও তা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ডাক্তারদের পিপিই দেয়া হয় নাই। আমরা হ-য-ব-র-ল বা বিশৃঙ্খল জাতিতে পরিনত হয়ে গেছি। যার যেমন ইচ্ছা তেমনি চলছি। করোনা প্রতিরোধ বা প্রতিহত করতে গিয়ে যে উৎসব শুরু করেছি এর ফল হিতে বিপরীত না হয়। এই মূহুর্তে দেশের সাধারণ কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদেরও দেখতে হবে, তবে সেটা এই জনসমাগম তৈরি করে নয়, সব ক্ষেত্রেই একটা দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সেটা হচ্ছে না। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সেরকম ছবিই দেখতে পাই। যা বন্ধ করতে হবে, দেশের স্বার্থে, মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে। আর এই যে কর্মকান্ড শুরু হয়েছে তা তো আরো ভয়াবহ। একজন আরেকজনকে দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আবার কেউ ভাবছে আমি কি পিছিয়ে পড়লাম।
করোনা বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আপনারা কেউ দয়া করে ঘরের বাইরে যাবেন না, সকলেই ঘরের ভিতরে থাকবেন। এখন পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয় না। এই ভাইরাসটা যেন বিস্তার লাভ করতে না পারে সে জন্য সরকার ১০ দিনের একটা ছুটি ঘোষণা করেছে, এই ছুটিতে আমাদের মধ্যে একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। এই ছুটিতে যার যার বাসস্থানে না থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে এইটা একটু আশঙ্কার বিষয়।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী। তাই আপনি যত দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন, আপনি তত নিরাপদ থাকবেন। এছাড়াও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার বার এই সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।