টাঙ্গাইলের এ পর্যন্ত মারা যাওযা ৭ জনের কেউই করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। মৃত্যুদের নমুনা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে বিষয়টি নিশিচত করেছেন সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তরা। তারা জ্বর, ঠান্ডা এবং শ্বাসকষ্টে মারা যান। এদিকে করোনার ভয়ে অনেক সাধারণ রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। যারাও যাচ্ছেন তাদের কাছে আসছেন না ডাক্তাররা। ফলে আতংক থেকেই যাচ্ছে।
জানা যায় গত ৬ এপ্রিল সোমবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য ও গোপলাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খান (৫৫) মারা যান। তিনি হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এই আওয়ামী লীগ নেতাকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দাফন এবং বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলীম আল রাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না।
৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে কলেজ মিয়া (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। তিনি ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের পাটিতাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জ্বর, সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃতের বাড়িসহ ৩ টি লকডাউন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা ডাঃ সাইফুর রহমান খান বলেন মৃত ব্যক্তির নমুনা রিপোর্টে করোনা আসে নাই।
এই দিন কালিহাতী উপজেলার বাঁশি গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৫৫) এক দিনমজুর মঙ্গলবার দুপুরে মারা গেছেন। প্রতিবেশীরা জানান কয়েকদিন যাবত তিনি জ্বর, ঠান্ডা এবং পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আলী। কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা বলেন মেডিকেল টীম গিয়ে নিশ্চিত হয়েছে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পরে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে ৭ এপ্রিল মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে অসুস্থ্য অবস্থায় এক গৃহবধূকে (২৮) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নে। ওই গৃহবধূ করোনা আক্রান্ত ছিলেন না।
৮এপ্রিল বুধবার রাত ১০টায় সখীপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে শামসুল হক (৫০) নামের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়। উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের দিঘীরচালা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি বড়হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ওই শিক্ষকের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল। দু-তিন দিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। মৃত্যু আগে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। বাড়ির সব লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান জানান, ওই শিক্ষক করোনা আক্রান্ত ছিলেন না।
৮ এপ্রিল বুধবার রাত ৮টায় টাঙ্গাইল পৌরসভার বেতকা আমিন বাজার এলাকার এমএ সামাদের ছেলে শাহ আলম (৪২) মারা যান। পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুস লাহেল ওয়ারেশ হুমায়ুন বলেন, শাহ আলম কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন। তিনি শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত ছিল। বেশ কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে নেওয়া পথে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রামাপদ রায় বলেন শাহ আলমের লাশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কমিটির মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।
৩১ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে হবিবুর রহমান হবি (৩৫) নামের পান বিক্রেতার মৃত্যু হয়। অসুস্থ্য হয়ে মারা যাওযার তিনি ৩-৪ দিন আগে গাজীপুর থেকে বাড়ি আসেন। নিহত হবি মধৃপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের টেক্কার বাজার গ্রামের হাসান আলীর ছেলে। তিনি জ্বর, ঠান্ডা, পাতলা পায়খানা ও রক্ত বমি করতে করতে মারা যান। জেলায় উপসর্গ নিয়ে প্রথমে হবির মৃত্যুতে এলাকায় ভীষণ আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার রুবিনা নেতৃত্বে একটি দল মৃত ব্যক্তির দাফন এবং বাড়ি লকডাউন করা হয়। তিনি করোনা আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার জানান, ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলেই করোনা হবে এ ধারণা ঠিক নয়। করোনা ভাইরাসের ভয়ে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। ফলে সাধারণ রোগ বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। যা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের আরো সচেতন সতর্ক হতে হবে। সময মতো চিকিৎসা নিতে হবে।
এবিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, যারা উপসর্গ নিয়ে মারা যান, আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ পাঠাই। এ পর্যন্ত টাঙ্গাইলে মারা যাওযা কেউ করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। তবে অন্যান্য রোগে মারা গেলেও এখন করোনা ভেবে আতংক ছড়িয়ে যাচ্ছে।
সিভিল সার্জন আরো জানান, টাঙ্গাইলে ২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। একজন মির্জাপুরের ও অন্যজন ঘাটাইলের। তারা ঢাকায় চিৎিসাধীন আছেন। এদিকে ১১ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত জেলায় মোট ২১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে পাওয়া রিপোর্টে ১৮৫ জনের নেগেটিভ ও ১ জনের পজেটিভ।