অলক কুমার : টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরী ও সরকারী সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে অপব্যবহার, অনিয়ম, কর্মকর্ত-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এই অভিযোগগুলো আনেন।
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম মজনুু ও সাধারণ সম্পাদক ড. ইকবাল বাহার বিদ্যুৎ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের নিকট এই অভিযোগগুলো করেন।
অভিযোগগুলো হলো –
১) গত ১০ জানুয়ারী ২০২২ তারিখ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে মাভাবিপ্রবি- এর পক্ষ থেকে কোন প্রকার নোটিশ প্রদান বা কর্মসূচী না নেয়ায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।
আমাদের মতে তাঁর এহেন ঘটনা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ঔদ্ধত্বপূর্ণ এবং অবমাননাকর।
তাঁর অতীত কার্যাবলী থেকেও আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ও তাঁর কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী।
২) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে তিনি ও তাঁর পছন্দমত প্যানেলের প্রচার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ও ড্রাইভার ব্যবহার।
৩) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনী প্রচার ও ভোট চাওয়ার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল টেলিফোন ব্যবহার।
৪) কর্মকর্তাদের প্রমোশন/আপগ্রেডেশন/পছন্দমত জায়গায় বদলীর প্রলোভন দেখিয়ে ভোট প্রার্থনা।
৫) কর্মকর্তাদেরকে লোকজন দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ব্যক্তিগত নথির জটিলতা বের করে বিপদে ফেলার হুমকি।
৬) ভোট কারচুপি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে ফলাফল নিজ প্যানেলের পক্ষে নেয়ার দম্ভোক্তি।
৭) বিগত ০৫ (পাঁচ) বছর অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর ও কোষাধ্যক্ষ না থাকায় PPR সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতা ও আর্থিক সুবিধার জন্য TEC কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন।
যা PPR অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ (কপি সংযুক্ত)।
৮) বিশ্ববিদ্যালয়ের RFQ পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য কোন TEC কমিটি কখনো আলাদাভাবে গঠিত না থাকলেও তিনি নিজেকে সভাপতি করে TEC কমিটি পুনর্গঠন করেন (কপি সংযুক্ত)।
৯) ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে গ্রুপিং ও কোন্দল সৃষ্টির লক্ষ্যে কতিপয় পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে তাঁর অফিসে সারাক্ষণ পরিবেষ্টিত থাকা।
১০) বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অফিসসমূহ ও বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর পছন্দের ও আজ্ঞাবাহী ব্যক্তিদের পদায়ন ও বদলী করে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা।
আরো অভিযোগ হলো –
১১) কর্মকর্তাদের সাথে তার আচরণ ও সম্বোধন অত্যন্ত আপত্তিকর, অসম্মানজনক ও চাকুরীবিধি পরিপন্থি।
১২) ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি হয়রানী অব্যাহত রেখেছেন।
১৩) মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর স্যারকে অবহিত না করে তথ্য গোপন করে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন বোর্ড শুরুর পূর্বে বাস্তবায়িত বিদ্যমান স্কেলে আপগ্রেডেশন প্রদানে জটিলতা তৈরি করে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার অপচেষ্টা।
১৪) বর্তমান সময়েও বিভিন্নভাবে প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি ও নিজস্ব বলয় তৈরীর অপচেষ্টা।
১৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশন সংবিধিতে পূর্বতন কর্মস্থলে প্রাপ্ত বেতনের ১০% অর্থ জমা দিয়ে অতীত চাকুরী গণনা করার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর) মহোদয়ের নিকট তথ্য গোপন করে ১০% অর্থ জমা না দিয়েই রেজিস্ট্রার মহোদয় তার অতীত চাকুরী গণনার বিষয়টি অনুমোদন করে নেন বলে জানা যায়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশন সংবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
রেজিস্টার ও ভিসি’র বক্তব্য –
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলাম এর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন জানান, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন।
তবে আমি ঢাকায় জরুরি মিটিং থাকায় চলে এসেছি। কি বিষয় আর কার বিরুদ্ধে চিঠিটি দেয়া হয়েছে তা আমি স্পষ্ট নই।
এ কারণে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।