কুড়িয়ে পাওয়া ওয়ান শুটার নিয়ে লুকোচুরি; পুলিশের ভূমিকা কেমন কেমন!!

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে কিশোর গ্যাং বেড়ে যাওয়া অতিষ্ট সাধারণ মানুষ এবং তাদের অভিভাবকরা।

তবে এ নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযান চললেও থেমে নেই এই গ্যাং স্টাররা। কারণ রয়েছে তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ।

একারণে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেই নারাজ। ফলে এলাকার মানুষ কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের ভয়ে রয়েছেন চরম আতংকে।

জিহাদ হোসেন (১২)। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের গোলড়া পূর্বপাড়া গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।

জিহাদ ছাতিহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র। তার কাছে একটি অবৈধ ওয়ান শুনার গাট অস্ত্র রয়েছে। এমন তথ্য পেয়েও পুলিশ সেই অস্ত্রটি উদ্ধার না করায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছয়টায় কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের গোলড়া পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে জিহাদ এবং তার দাদা আব্দুল হাইয়ের বাড়ি কোথায় সবাই দেখিয়ে দেন।

এরপর এলাকার লোকজনের মধ্যে গুনঞ্জন শুরু হয়। কিছুদুর এগিয়ে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া গেল জিহাদের মা শিল্পী বেগমকে। কথা হয় তার সাথে।

তিনি জানান, তার ছেলে এই অস্ত্রটি সম্প্রতি বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়েছে। এরপর বাড়িতে এনে সবাইকে দেখানোর পর এটি স্থানীয় ইউপি সদস্য মোতালেবকে জানানো হয়। পরবর্তীতে তিনি এসে ওই অস্ত্রটি নিয়ে যান।

এর একদিন পর তিনি অস্ত্রটি আবার জিহাদের বাড়িতে দিয়ে আসেন যেখান থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে সেখানে ফেলে দিতে বলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক এলাকাবাসী জানায়, ওই গ্রামের আব্দুল হাই ওরফে টুক্কু মাছ ধরতে গিয়ে অস্ত্রটি কুড়িয়ে পান।

পরে অস্ত্রটি তার কাছে রেখে দেন। কয়েকদিন পর ওই অস্ত্রটি তার নাতি জিহাদের কাছে রাখতে দেন। এর মধ্যে জিহাদের সাথে তার কয়েকজন বন্ধুর মনোমালিন্য হয়।

এর জের ধরে জিহাদ বন্ধুদের অস্ত্রটি দেখালে এলাকায় জানাজানি হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেনকে অবগত করেন।

তিনি বিষয়টি কালিহাতী থানা পুলিশকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো পুলিশ অস্ত্রটি ফেলে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয় ইউপি সদস্যকে। তাদের ভূমিকাও যেন কেমন কেমন!!

জিহাদের মায়ের কথা –

জিহাদের মা শিল্পী বেগম জানান, তার শ্বশুর নয়, জিহাদই অস্ত্রটি কুড়িয়ে পেয়েছে। সেটি মরিচা পড়া, অকেজো। জিহাদ বন্ধুদের দেখালে এলাকায় জানাজানি হয়।

বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার মোতালেবকে জানানো হয়। মেম্বার পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার দায়িত্ব নেয়। পুলিশকে জানালে তারা টাকা দাবি করে।

পরে মেম্বার নিজেই এসে অস্ত্রটি ফেলে দিতে বলেন। পরে তারা অস্ত্রটি ফেলে দিয়েছেন বলে জানান।

এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, অস্ত্রটি এখনও আব্দুল হাই টুক্কুর ঘরেই রয়েছে। মেম্বার, চেয়ারম্যান ও পুলিশ মিলে বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –

ইউপি সদস্য মোতালেব মিয়া জানান, বিষয়টি কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফয়েজকে জানানো হলেও তিনি এলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়া অস্ত্রের বিষয়টি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপিকে জানানো হয়েছে।

পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন জানান, অস্ত্র কুড়িয়ে পাওয়ার বিষয়ে তার জানা নেই।

কালিহাতী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়েজ জানান, খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। তবে এর কোন সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তবে অস্ত্রটি উদ্ধার না করে টাকা চাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। সম্পাদনা – অলক কুমার