ঘুড়ি উড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে ঘাটাইলের গৃহবন্দীরা

প্রাণঘাতী করোনা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব। করোনার ভয়াবহতা বদলে দিয়েছে পুরো পৃথিবীর দৃশ্যপট। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা মানুষগুলো এখন গৃহবন্দী। এই অবস্থায় নিরাপদে থাকতে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে বন্ধ সব আউটডোর খেলাধুলা। আর এই লম্বা ছুটিতে বাঙালির ঐতিহ্য রঙিন ঘুড়ি নিয়ে মেতে আছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার প্রায় সব বয়সের মানুষ।

শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের অনেকেই একসাথে ফাঁকা জায়গায় ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যায়।

বিকেল হলেই ঘাটাইলের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো। এর মধ্যে ফতের পাড়া ব্রিজ এলাকায় তো চলে রীতিমতো ঘুড়ি উৎসব। ঘুড়ির সুতোয় কাটাকাটি খেলে কিংবা দূর আকাশে ঘুড়ি পাঠিয়ে এ যেন করোনাকালীন ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার এক সুস্থ বিনোদন।

এলাকাবাসী বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা বলা যাচ্ছে না। আবার বাড়ীতে দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে অনেকের মধ্যেই ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করছে। অনেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে সেই ক্লান্তি ও অবসাদ ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে বদ্ধ হয়ে থাকা এক মানসিক যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মেলছে।

স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সৃষ্টি শুভ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। আগে নিয়মিত স্কুলে যেতাম। বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করতাম। এখন তো আর সেটা সম্ভব নয়। সবসময় রুমে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। এদিকে মা বাবা বাড়ী থেকে বের হতে দেন না। অন্যদিকে একঘেয়েমী কাটাতে বিকেলে এখন সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।

অন্য এলাকা থেকে আসা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আশরাফুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী হয়ে জীবন যাপন করছি। গৃহবন্দীদশায় থাকার ফলে মানুষের মনে যে ক্লান্তি ও অবসাদ জমেছে, এই ঘুড়ি ওড়ানোর সময় তা কেটে যায়। মনটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

ঘাটাইল উওর পাড়া থেকে আগত রাসেল মিয়া বলেন, তার দুই ছেলে-মেয়ে। এতদিন গৃহবন্দী থেকে হাঁপিয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার উপায় নেই। শুনলাম এই এলাকায় নাকি ঘুড়ি উড়ানো হয়ে থাকে। তাই ওদেরকে নিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য দেখতে চলে এসেছি। এখন খুব ভালো লাগছে। ঘুড়ি ওড়ানো দেখে পেছনে ফেলে আসা সোনালি অতীতের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।

এদিকে ঘুড়ি ওড়ানোর বিষয়ে এক বৃদ্ধ বলেন, এর আগে কখনো এত ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়নি। আগে সাধারণত শীতকাল থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যেত। কিন্তু এবার গরমের মধ্যে গত রমজান মাস থেকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যাচ্ছে। লকডাউনে ঘরবন্দী তরুণরা ঘরে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে অলস সময় পার করছে। এই অলসতা দূর করতেই তরুণদের পাশাপাশি যুবক ও বৃদ্ধরাও এসেছে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য।