টাঙ্গাইলে দুদকের মামলার পর আত্মগোপনে আ’লীগ নেতা কুদরত-ই-এলাহি

আ’লীগ নেতা কুদরত-ই-এলাহি

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমির কুদরত-ই-এলাহী খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, কিছু অভিযোগের অনুসন্ধানের স্বার্থে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের খাত ওয়ারি আয় ও ব্যয়ের বিবরণ, অগ্রিম পাওনা ও প্রদানের রেজিস্টার, ব্যাংকের আওতাধীন মার্কেট সমূহের ভাড়াটিয়াদের তথ্যসহ আমির কুদরত-ই-এলাহী খান, তার স্ত্রী ও সন্তানসহ নির্ভরশীলদের সম্পদ/ সম্পত্তির দলিল এবং প্রথম থেকে সর্বশেষ দাখিল করা আয়কর রিটার্নের কপি সরবরাহের অনুরোধ করা হয়।

আরো পড়ুন – সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক এখনো সক্রিয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে

কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে চাহিদা মাফিক কাগজপত্র সরবরাহ করেন নি।

তার বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দায়ের করার অনুমোদন দেয়া হয় বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

এবিষয়ে আমির কুদরত-ই-এলাহী খানের বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সমবায় মার্কেট ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, কুদরত-ই-এলাহী খান বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।

দুর্নীতির বর্ণনা –

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংকের সভাপতি পদে ২০১৫ সালে মেয়াদ শেষ হয়েছে কুদরতের।

কমিটির মেয়াদ শেষে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনও দেওয়া হয়।

মনোনয়ন বিক্রি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টি হলে নির্বাচন স্থগিত এবং অ্যাডহক কমিটির বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন কুদরত।

আরো পড়ুন – পরীক্ষায় জালিয়াতি, হতে পারলো না পুলিশ। জালিয়াত হিসেবে গ্রেপ্তার

সেই মামলায় নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। মামলার রায়ের সুযোগ নিয়ে ১০ বছর ধরে সভাপতি পদে বহাল তবিয়তে আছেন কুদরত।

ব্যবসায়ীদের কথা –

ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের নিজস্ব শূন্য দশমিক ৮১ একর জায়গার ওপর একটি দ্বিতল মার্কেট ভবনে ১৫৫ জন ব্যবসায়ীকে দোকান বরাদ্দ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘদিন ওই ১৫৫ জন ব্যবসায়ী বরাদ্দকৃত দোকানে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

অভিযোগ আছে, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি কুদরতের সঙ্গে সখ্য করে পারস্পরিক যোগসাজশে সমবায় ব্যাংকের তহবিল তছরুপ করাসহ মার্কেট ভবন নির্মাণের নামে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দেন সমবায় অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

তথ্যসূত্র –

অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, কুদরতকে ব্যবহার করে অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা নানা সুবিধা নিয়েছেন; নতুন করে আরও সুবিধা নিতে মার্কেটের ৪, ৫ ও ৬ তলার দোকান বিক্রির আদেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুদরত-ই-এলাহি তার পরিষদকে পাশ কাটিয়ে চাচাতো বোনজামাই দিদারুল ইসলামকে দিয়ে সমবায় ব্যাংকের একটি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন।

সূত্র জানায়, গত ৫ মাসে এ হিসাব থেকে কুদরত প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।

আইন লঙ্ঘন করে দিদারকে সই করার ক্ষমতা দেওয়ায় লেনদেন করতে জবাবদিহি করতে হয় না সভাপতিকে। বিষয়টি স্বীকারও করেন হিসাবরক্ষক দিদার।

তিনি বলেন, আমাকে সই করার ক্ষমতা দিয়েছেন চেয়ারম্যান, এ বিষয়ে আপনি তার কাছ থেকে জেনে নিলে ভালো হয়।

এছাড়া সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কুদরত সভাপতি হিসেবে সমবায় ব্যাংকের তহবিল থেকে ঠিকাদারকে ধার দিয়েছেন ৬ কোটি ৮৫ হাজার ৬৩৪ টাকা।

অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমবায় ব্যাংকের কাছে ৫ বছর আগের পাওনা এখনো বুঝে পায়নি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, কুদরত সাহেব আমার ৫ বছর আগের পাওনাই দিচ্ছেন না, হাওলাত দেবেন কেন?

আমার কাজের টাকা আদায়ের জন্য আমি বারবার তাগাদা দিলেও নানা টালবাহানা করছেন চেয়ারম্যান।

অডিট রিপোর্ট সূত্রে আরও জানা যায়, বিভিন্নভাবে মামলা পরিচালনার জন্য কুদরত ই এলাহি আইনজীবীর খরচ হিসাবে ৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

এ অবিশ্বাস্য লেনদেন নিয়ে সমবায় কর্মকর্তারাও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় অফিসের কর্মকর্তারা।