অলক কুমার : নামমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ। যাতে আমরা সন্তান পরিবার নিয়ে শান্তিতে বাস করতে পারি। আর প্রতিশ্রুতি চাই না; চাই বাস্তবায়ন।
রাক্ষসী যমুনার তীরবর্তী ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষ করুণ আর্তনাদের সাথে এ কথাগুলো বলেছেন।
বর্ষা এলেই যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা।
তারা থাকেন চরম আতংকে, কখন যেন বাড়িঘর চলে যায় আগ্রাসী যমুনার পেটে। ঠাঁই নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের জায়গায় আশ্রিত। এবারো সেই দৃশ্যের ব্যতিক্রম নয়।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ
ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে ফেলা বালুর বস্তা কাজে দেয় না। এছাড়া ব্লক দিয়ে বাঁধানো নদীর পাড় টেকসই হয় না। দেবে গিয়ে আবার ভাঙন ধরে।
ভূক্তভোগীদের কথা –
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, নদী সব কিছু কাইরা নিছে; চার বার বাড়ি ভাঙছে।
মর্জিনা বেগম বলেন, আমাগো এখন যাবার জায়গা নাই। আমরা ভাসমান। সরকার থিকা কিছই পাই না।
আলীপুর গ্রামের মামুন মাস্টার বলেন, আমাদের গ্রামের সিংহভাগই নদীতে চলে গেছে। গ্রামের দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ ও বাজার সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
আমার বাড়িসহ এবারো শতাধিক বাড়ি ভেঙেছে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।
আরো পড়ুন – দেড় বছর পর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই
ভাঙনের শিকার আজিজ মিয়া বলেন, ‘আমাগো পাকা ঘরবাড়ি ও টয়লেট সব ছিল। আমাগো অবস্থা এতো খারাপ আছিল না; বাঁইচা আছি এটাই কষ্টের।
রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, সরকার থেকে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়। যাদের বাড়ি ভাঙে নাই এমন লোকও সাহায্য পায়।
ক্ষোভের কন্ঠে অনেকেই বলেন আপনারা’ত প্রতিবারই লেইখা নিয়া যাইন। আমাগো কোন লাব অয় না তো। আমরা ছিলাম এলাকার বড় গিরস্থ।
কিন্তু যমুনা নদীই আমাদের সর্বনাশ করে দিছে। আজ নিঃস্ব। অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলী, কাকুয়া, ধুলবাড়ী, পানাকুড়া, কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ি, বেলটিয়া, আলীপুর, শ্যামসৈল, বিনোদ লুহুরয়িা, ভৈরববাড়ী, বেনুকুর্শিয়া এবং ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা নিকরাইল ও অলোয়া ইউনিয়নের বহু গ্রামের মানুষ প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হন। এছাড়া নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও হয় নদী ভাঙন।
আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামি গ্রেপ্তার নাই
ভুক্তভোগীরা আরো জানান নদীর পানির তীব্রতা, নদী থেকে প্রভাবশালীদের অবৈধ বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী।
গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন এই এলাকার মানুষকে বাঁচালে হলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধই নির্মাণ করতে হবে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এর বঙ্গবন্ধু সেতুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, সেতু তীরবর্তী আমাদের এরিয়ায় ব্লক দিয়ে বাঁধ করা হয়েছে।
সেতুর ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন হয় কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রতিবছরই অসংখ্য মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হন।
টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং ভূঞাপুরে নদী ভাঙ্গন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের প্রপোজাল তৈরি করা হয়েছে; অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারনে গত দুই বছর অগ্রগতি হয়নি।
আরো পড়ুন – স্কুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
টাঙ্গাইল সদর আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন বলেন, শুধু মাত্র চরপৌলী গ্রামেই কয়েকশ ভিটে বাড়ি নদীতে চলে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের এবার ২০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ১৫.৩ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা হবে।