দেলদুয়ারে গরু চোরের গুলিতে আহত ১, পুলিশের বলছে গুলি না

মোস্তফা কামাল নান্নু, বিশেষ প্রতিবেদক :

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোরেরা। তাদের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ।

প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল।

গত এক সপ্তাহে দুই এলাকার দু’জনের বাড়ি থেকে ৯টি গরু চুরি হয়েছে। চোর ধরতে গিয়ে তাদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে গরুর মালিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গভীর রাতে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নম্বরবিহীন ট্রাক, ভটবডি, পিকআপ, সিএনজিতে উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরেরা।

আর এসব ঘটনায় খুব কম সংখ্যক মামলাই রেকর্ডভূক্ত হয়। ফলে চোরের দল পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।

অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিকার পাবেন না এ আশংকা বা পুলিশি হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগও দেন না ভূক্তভোগীরা।

পুলিশের নজরদারির অভাব আর রাত্রিকালীন টহল না থাকার কারণে সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা কৌশলে চুরি করে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।

লাউহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাসমত আলী খান বলেন, প্রতি রাতেই গোয়ালে হানা দেয় চোরের দল; তাই রাত জেগে গোয়াল পাহারা দিতে হয়।

লাউহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক পলাশ ভূইয়া বলেন, আমাদের গ্রামের অতি দরিদ্র লালভানু তার স্বামী কেছু পাগলাকে নিয়ে গরু লালন পালন করে দুধ বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালায়।

কয়েকদিন আগে তার তিনটি গরুই চুরি হয়ে গেছে। ব্যাচারি দুধ বিক্রি করে সংসার চালাত; এখন ভিক্ষা করা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেলদুয়ারে কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর গরু চোরেরা যখন এসব মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

রাতের বেলায় যেসব সড়কে আলো থাকে না কিংবা অনেকটা নির্জন ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল; বিশেষ করে সে সব এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই ডুবাইল গ্রাম থেকে গত সোমবার রাতে হাসেন আলী খানের ছেলে হাসমত আলীর একটি গাভী এবং তারই ভাই বাছেদ খানের একটি ষাঁড় গরু ও একটি গাভী চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা।

ভূক্তভোগীদের কষ্টের কথা –

ডুবাইল গ্রামের মনির হোসেন জানান, চুরির ঘটনা টের পেয়ে পার্শবর্তী বাড়ির রঙ্গু খানের ছেলে শহীদ খান বাঁধা দিতে গেলে, হাইওয়ের পাশে তাকে লক্ষ্য করে চোরেরা রাবার বুলেট ছুড়ে।

বুলেটের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গোয়াল থেকে গরু বের করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। রাতে গাড়ির ভেতরে গরু দেখলে আটক করতে ভয় পায় মানুষ।

কারণ পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। যে কারণে সহজে পার পেয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরের দল।

গরু চুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত ) কামাল হোসেন বলেন, থানায় গরু চুরির বিষয়টি আমরা জেনেছি; শীতের এই সময়টাতে এরকম চোরের ঘটনা সারাদেশেই একটু বাড়ে; তবে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে রাবার বুলেটের গুলিতে আহতের খবরটি সঠিক নয়; শহীদ খান চোরদের ধাওয়া করার সময় রাস্তার পাশে থাকা রডের সাথে আঘাত প্রাপ্ত হন। সম্পাদনা – অলক কুমার