মাভাবিপ্রবি ছাত্র মোশারফ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত দুই আসামী আট বছর ধরে নিখোঁজ

লাশটা পেলেও তো কবর দিতে পারতাম – মনিরুলের বাবা

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোশারফ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত নিখোঁজ দুই আসামী

নিজস্ব প্রতিবেদক : আট বছর ধরে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পরিবার।

আট বছরেও সন্তানের খোঁজ না পেয়ে দুই জনের মা পাগল প্রায়।

পরিবারের দাবি একটি হত্যা মামলার আসামী এ দুজনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একদল সশস্ত্র লোক তুলে নিয়ে যায়।

নিখোঁজ দু’জন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম এবং রসায়ন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম রবিউল হাসান।

মনিরুল টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। রবিউল সখীপুর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত এস এম শওকত আলীর ছেলে।

তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাদাত খালেদ মোশারফ হত্যা মামলার এক ও দুই নম্বর আসামী।

ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৩ মে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেনির শিক্ষার্থী আবু সাদাত খালেদ মোশারফ নিহত হন।

নিহতের বাবা বাদী হয়ে ওই বছর ১৬ মে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় মনিরুলকে এক নম্বর ও রবিউলকে দুই নম্বর আসামী করা হয়।

পরিবারের বক্তব্য –

রবিউলের ভাই এস এম রওশন জলিল এবং মনিরুলের বাবা আব্দুল খালেক জানান, মামলা হওয়ার পর মনিরুল ও রবিউল গ্রেপ্তার এড়াতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা গ্রামের মকলেছার রহমান মাস্টারের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

২০১৫ সালের ১০ আগস্ট দিবাগত গভীর রাতে মাইক্রোবাসযোগে একদল সশস্ত্র লোক বাড়িটি ঘেরাও করে।

তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে রবিউল ও মনিরুলকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে তারা থানা পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন।

কিন্তু কেউ তাদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেননি।

রওশন জলিল ২০১৬ সালের ৬ মে নীলফামারীর ডিমলা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন।

এতে তিনি রবিউল ও মনিরুলকে তুলে নেওয়ার ঘটনার বনর্না দেন।

পরে দুজনের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ধরনা দিলেও তাদের কোন সন্ধান মিলেনি।

মনিরুলের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেলো, সে কোথায় আছে, কেমন আছে, নাকি মারা গেছে কিছুই জানি না।

ছেলের শোকে তার মা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, লাশটা পেলেও তো কবর দিতে পারতাম। মনে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম।

রবিউল হাসানের ভাই এস এম রওশন জলিল বলেন, ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমার মা কান্না করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন।

তিনি এখনও রবিউলের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। আমার মায়ের একটাই আশা মরার আগে রবিউলকে দেখে যেতে চান।

এদিকে মোশারফ হত্যা মামলায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ মনিরুল ও রবিউলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।

আইনজীবীর বক্তব্য –

এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁশুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

অভিযোগ পত্রে মনিরুল ও রবিউলকে পলাতক দেখানো হয়েছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন।

এই দুইজন ছাড়া অন্য আসামীরা সবাই জামিনে রয়েছেন। তারা নিয়মিত আদালতে হাজিরাও দিচ্ছেন।