সব ওয়েবসাইটের ‘কুকিজ’ অ্যাকসেপ্ট করা কি ঠিক?

কুকিজ ব্যবহার

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক : বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই ক্রমাগত আপনাকে কুকিজ অ্যাকসেপ্ট করতে বলা হয়।

প্রশ্ন হলো, আমরা যেসব ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারি তার সবগুলোর ক্ষেত্রেই কি কুজিজের অনুমতি দেওয়া উচিত এবং এটা কতটা নিরাপদ?

কুকিজ প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় দুটোই হতে পারে।

তবে, আপনার কাছে অনুমতি চাওয়া, প্রতিটি ওয়েবসাইটের কুকিজের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

এ কারণে আমাদের জানতে হবে, কখন কুকিজের অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে এবং কখন ঠিক হবে না।

আরো পড়ুন – একই প্রশ্নের নিয়োগ পরীক্ষায় টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ের সফলতা ও বিফলতার কাহিনী

কুকিজ কী?

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কুকিজ গ্রহণ করবেন কি না, তখন আসলে আপনাকে এর মাধ্যমে টেক্সট ফাইল গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে বলা হয়। এই টেক্সট ফাইলগুলো আপনার ওয়েব ব্রাউজারে সংরক্ষিত হয়। সেগুলো পরবর্তীতে আপনার ব্রাউজার থেকে ডেটা ট্র্যাক এবং সংগ্রহ করে, সেই তথ্যগুলো ওয়েবসাইটটিতে ফেরত পাঠায়। একটি ওয়েবসাইটের মেমরি উন্নয়নের জন্য কুকিজ প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীদের তথ্য মনে রাখতে পারে। অন্যথায়, দেখা যাবে আপনি অনলাইন শপে কিছু কেনার জন্য শপিং কার্টে রাখলেন এবং ব্রাউজার বা ট্যাব বন্ধ করলেন অথবা কয়েক মিনিট পরে সেখানে ফিরে দেখা যাবে সেগুলো আর কার্টে নেই। যা খুবই বিরক্তিকর হতে পারে।

তাহলে আমরা টেক্সট ফাইলগুলোকে ‘কুকিজ’ বলছি কেন?

১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি, ল্যু মনটুলি নামে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার এই টেক্সট ফাইলগুলো আবিষ্কার করেন এবং তাদের কুকিজ নামে অভিহিত করেন। কারণ তিনি কলেজের একটি অপারেটিং সিস্টেম কোর্স থেকে ‘ম্যাজিক কুকি’ শব্দটি শুনেছিলেন। সেখান থেকে তিনি এর নামকরণ করেন ‘কুকি’।

আরো পড়ুন – আইন চলবে মন্ত্রী বা পুলিশের নির্দেশনায়?

কুকিজ কি খারাপ কিছু?

একটি প্রশ্ন ও উত্তর বিষয়ক ওয়েবসাইট জাস্টঅ্যানসার.কম-এর একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ক্রিস অ্যাঙ্গুলো বলেছেন, ‘সামগ্রিকভাবে, কুকিজ খারাপ বা ভালো কোনোটাই নয়। আপনার ভিজিট করা সাইটগুলোতে কুকিজ গ্রহণ করা আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।

যার মাধ্যমে আপনি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, আপনার তথ্য থেকে ওয়েবসাইটগুলোতে আপনার জন্য আরও ভালোভাবে সাজাতে পারবে কি না।’

উদাহরণস্বরূপ, আমরা উপরে একটি অনলাইন স্টোরের শপিং কার্টের তথ্য মনে রাখার ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছি। যখন একটি ওয়েবসাইট আপনার লগ-ইন তথ্য সংরক্ষণ করে। যাতে আপনাকে বার বার আপনার ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড টাইপ করতে না হয়।

তাতে যদি আপনার সুবিধা হয়, তাহলে আপনাকে ওয়েবসাইটের কুকিজ এবং ল্যু মনটুলিকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

কুকিজ ছাড়া, আপনি যদি আপনার ডিভাইসে আবহাওয়ার ওয়েবসাইটে যান, আপনার এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে বা রোদ হচ্ছে কি না তা দেখতে, আপনাকে প্রতিবার আপনার জিপ কোডটি লিখতে হবে। ফেসবুক, লিংকডইন এবং টুইটার ব্যবহার করলে আপনি যখন ফিরে আসেন সেগুলো আপনার প্রোফাইল মনে রাখে কুকির মাধ্যমে। কুকি ইন্টারনেটের সর্বত্রই রয়েছে।

সাধারণভাবে, কোনো ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অনুসারে কুকিজ গ্রহণ করা উচিত। তবে, সব কুকিজ নয়।

আরো পড়ুন – কালিহাতীতে নিলাম বালুর আড়ালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি

কীভাবে বুঝবো কোন কুকিজ গ্রহণ করা উচিত এবং কোনটি উচিত না?

ইন্টারনেটে একাধিক ধরনের কুকি আছে। বাল্টিমোর কাউন্টির মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক টিম ফিনিন ব্যাখ্যা করেছেন, আমরা সাধারণত ৩ ধরনের কুকির মুখোমুখি হই।

সেশন কুকিজ :

ফিনিন বলেন, ‘সেশন কুকিজ ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে দরকারি। এগুলো ওয়েবসাইটগুলোকে আপনার ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট সরবরাহ করতে এবং সেখানে আপনার পছন্দগুলো মনে রাখতে সহায়তা করে। আপনি যখন আপনার ব্রাউজার বন্ধ করেন, তখন সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়।’

পারসিসটেন্ট কুকিজ

ফিনিন বলেন, ‘আপনি যে ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করেন সেগুলোতে পারসিসটেন্ট কুকিজ তৈরি হয় এবং আপনার ডিভাইসে সেগুলো সংরক্ষিত হয়।

এগুলো রিটার্ন ভিজিট চিনতে পারে এবং আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন সহায়ক জিনিসগুলো মনে রাখতে পারে। যেমন- আপনার অ্যাকাউন্ট।’

আরো পড়ুন – হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কি? শঙ্কায় নিহত শিহাবের পরিবার

থার্ড-পার্টি কুকিজ

ফিনিন এদের ব্যাখ্যা করেন, ‘সবচেয়ে কম দরকারি এবং সবচেয়ে বেশি অনধিকার প্রবেশমূলক’ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো তৃতীয় পক্ষের তৈরি করা কুকি এবং আপনি যে ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করছেন তাদের তৈরি টেক্সট ফাইল নয়।

এই তৃতীয় পক্ষগুলো তাদের মার্কেটিংয়ের জন্য আপনার ওয়েব কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ এবং একীভূত করতে পারে।’

তাহলে কী থার্ড-পার্টি কুকি থেকে দূরে থাকতে হবে?

ফিনিন বলেন, ‘আপনি যদি না চান যে ওয়েবসাইটে আপনার আচরণ বিজ্ঞাপনদাতাদের মাধ্যমে ট্র্যাকড হোক, তাহলে আপনি থার্ড-পার্টি কুকিজ বøক করতে পারেন।’

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ফিনিনের একজন সহকর্মী রবার্তো ইউস বলেন, ‘আপনি যখন ‘সব কুকির অনুমতি দিন’-এ ক্লিক করেন, তখন আপনি কয়েক ডজন থার্ড-পার্টি কুকি এবং ট্র্যাকার ইনস্টল করার জন্য ওয়েবসাইটকে পূর্ণক্ষমতা দিচ্ছেন। যখন আপনি ব্রাউজ করেন, এই ট্র্যাকারগুলো আপনাকে অনুসরণ করতে পারে এবং থার্ড-পার্টি কোম্পানিগুলোকে জানায় যে আপনি কোন ওয়েবসাইটগুলোকে দেখেন।

আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামিঔ গ্রেপ্তার নাই

বিজ্ঞাপনদাতারা সেগুলো থেকে জানতে পারবে, আপনি কোন সংবাদ আর্টিকেল পড়েন এবং সার্চ ইঞ্জিনে আপনি কোন পণ্যগুলো খুঁজেন।’

কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবারসিকিউরিটি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং গ্র্যাজুয়েট সাইবারসিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক ফ্রেড শল বলেন, ‘ট্র্যাকিং কুকিজগুলো আপনার ব্রাউজিং অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে, তথ্যগুলো অন্য সাইটগুলোতে বিক্রি করতে পারে। যাতে তারা আপনার সার্চের সময় তাদের বিজ্ঞাপন যুক্ত করতে পারে।’

থার্ড-পার্টি কুকিজকে বøক করবেন কীভাবে?

আপনি একটি সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে, আপনার নির্বাচিত ব্রাউজারে (গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফ্ট এজ, মজিলা ফায়ারফক্স, অ্যাপল সাফারি এবং ইত্যাদি) থার্ড-পার্টি কুকিজ কীভাবে বøক করবেন তার নির্দেশাবলি সন্ধান করে তা করতে পারেন। তবে, আপনি যদি আপনার ব্রাউজারে থার্ড-পার্টি কুকিজ আসা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে কিছু ওয়েবসাইট আর ভালোমতো কাজ করছে না।

বেন্টলি ইউনিভার্সিটির একজন সিনিয়র লেকচারার এবং অনলাইন এবং অফলাইন স্ক্যাম নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট স্ক্যামিসাইড.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওয়েইসম্যান বলেন, ‘কিছু ওয়েবসাইট তাদের কুকিতে সম্মতি না দিলে, আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস করতে দেবে না।’

তাই এমন হলে, আপনি ওয়েবসাইটটিকে আপনার ব্রাউজারে একটি তালিকায় যুক্ত করতে পারেন, যেগুলো থেকে আপনি থার্ড-পার্টির কুকিজ গ্রহণ করবেন; সাধারণত সব ব্রাউজারেই এই সুবিধাটি রয়েছে।

আরো পড়ুন – সোহেল হাজারী কোন অথরিটিতে এমপি? জানতে চান হাইকোর্ট

উদাহরণস্বরূপ, গুগল ক্রোমের ক্ষেত্রে, আপনি, ‘সেটিংস>প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি>কুকিজ অ্যান্ড আদার সাইট ডেটা‘-এ যেতে পারেন, তারপরে, যেখানে বলা হয়েছে ‘সাইটস দ্যাট ক্যান অলওয়েজ ইউজ কুকিজ,” সেখানে আপনার বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো যোগ করতে ক্লিক করতে পারেন।

ওয়েসম্যান বলেন, ‘কুকিজ ভোক্তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে এবং ওয়েবসাইটকে আরও ভালোভাবে ব্যবহারোপযোগী করতে পারে। কিন্তু, অনেক সময় আপনার কুকিজকে অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, আপনি যে ওয়েবসাইটটিতে আছেন তা যদি এনক্রিপ্টেড না থাকে।

এ ক্ষেত্রে, আপনার ডেটা সুরক্ষিত নয় এবং ক্রেডিট কার্ডের তথ্যের মতো ব্যক্তিগত ডেটা আরও সহজেই চুরি হতে পারে।’

একটি ওয়েবসাইট এনক্রিপ্টেড কি না, তা আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন এর ইউআরএল দেখে। আপনি যদি ওয়েব অ্যাড্রেসে দেখেন যে, ‘এইচটিটিপি’-এর পরে একটি ‘এস’ নেই, তাহলে সেই ওয়েবসাইটটি এনক্রিপ্টেড নয় এবং অনিরাপদ।

তাহলে কী আমরা কিছু ওয়েবসাইট থেকে কুকিজ গ্রহণ করব?

হ্যাঁ, আপনি বিশ্বাস করেন এবং প্রায়শই ব্যবহার করেন এমন ওয়েবসাইটগুলো থেকে কুকিজ গ্রহণ করতে পারেন।

কেন না, আপনি সম্পূর্নরূপে কুকিজ গ্রহণ করা বিরত থাকতে পারবেন না। সম্পাদনা – অলক কুমার