সাংবাদিক জাহাঙ্গীরের করোনা জয়ের মূলে ছিল “দৃঢ় মনোবল”

করোনাজয়ী আত্মপ্রত্যয়ী এক সাংবাদিক। করোনা আক্রান্ত হলেও মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন দৃঢ় মনোবলের সাথে জয় করেছেন কোভিড-১৯।

হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আইসোলেশনে থেকে কিভাবে করোনা জয় করলেন সেই গল্প শুনিয়েছেন তিনি। যা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল:-  

উপসর্গ না থাকলেও গত ১১ মে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্বপ্রণোদীত হয়ে করোনা পরিক্ষার নমূনা দেন জাহাঙ্গীর হোসেন। ১৪ মে পাওয়া রিপোর্টে জানতে পারেন তিনি করোনা পজিটিভ।কোনো হাসপাতালে যাননি তিনি।ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসায় আইসোলেশনে থেকে আজ তিনি করোনামুক্ত। গত ২৩ ও ২৯ মে পরপর দুইটি নমূনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। আত্মবিশ্বাস থাকলে ঘরে থেকেও করোনা মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী। ভাইরাসটি কিভাবে আমার শরীরে সংক্রমিত হল তা আমি বলতে পারবো না। যে কোন জায়গা থেকেই হতে পারে। এই ভাইরাসটির একটি বিশেষ্যত্ব একেক জনের শরীরে একেক রকম। আমার শরীরে তেমন কোন উপসর্গ দেখা দেয়নি।তবে হালকা গলা ব্যথা ছিল।

সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর করোনা জয়ী হবার গল্প বলতে গিয়ে বলেন, নিশ্চই সৃষ্টিকর্তা সবারই জন্ম মৃত্যু লেখে দিয়েছেন।আমি সৃষ্টি কর্তার উপর আস্থা রেখেছি। ভয় পেলে মানসিক দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ভাইরাস আমার সাথে পেরে যাবে। সেই কথা আমি আগেই জানতাম।সেজন্য আমি সব সময় মনোবল শক্ত রেখেছি। আমি কোনভাবেই দুর্বল হয়নি। 

আসলে আত্মবিশ্বাস থাকলে ঘরে বসেই করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমি গত ২৫ দিন ঘরে থেকে করোনা যুদ্ধ করেছি। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলেছি। চিকিৎসা নিয়েছি। তিনি বলেন, এখানে বিশেষ করে বলা উচিত আমার স্ত্রী ২৪ ঘণ্টা আমার পাশে থেকে আমার সেবা করেছেন। কোন অবহেলা করেননি। ভয়ও পাননি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সে আমার সেবা করেছে। আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমার এত পাশে থেকেও করোনায় আক্রান্ত হননি তিনি।

করোনাকালীন কি কি করেছেন জানতে চাইলে বলেন, হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করেছি। প্রচুর গরম পানি পান করেছি।আর প্রতিদিন গরম পানির ভাপ নিয়েছি কয়েকবার। গরম পানি পান করায় গলায় সামান্য ব্যথা থাকায় কিছুটা শান্তিও পেয়েছি । মালটার জুস আর লেবুর শরবত খাওয়া হয়েছে অনেক বেশি। আদা, এলাচ, হলুদ, আর দারুচিনি গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে ভাপ নিয়েছি পরে চা হিসেবে খেয়েছি। সকালের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।সকাল-বিকেল হালকা ব্যায়াম করেছি।নিয়মিত নামাজের অভ্যাস তো রয়েছেই। ডাক্তারের পরামর্শে ৭ দিন তিন বেলা প্যারাসিটামল, এক বেলা এ্যজিথ্রুমাইসিন-৫০০, এরিট্রোভিট-বি, ক্যাভিক্স-সি ভিটামিন ওষুধও খেয়েছি।

অন্যদিকে, আমার স্ত্রী আফরোজা হোসেন আঁখি গত ২৫ দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমার সেবা করেছেন। তিনি হ্যান্ড গ্লাভস, মুখে মাস্ক পড়ে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে আমার সেবা করেছেন। প্রতিদিন স্যাভলন দিয়ে ঘর মুছে দিয়েছেন। এই কয়েক দিন আমি আলাদা বাথরুম ব্যবহার করলেও বাথরুম থেকে আসার পর প্রতিবার ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তা পরিষ্কার করেছেন। আর প্রতি রাতে আমার পরনের কাপড় ও তার কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছেন। ২০ মিনিট পরপর আমরা দুজনেই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করেছি।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে আশপাশের মানুষ সেটা ভালোভাবে নেয় না। এটা ঠিক নয়।তার ক্ষেত্রে অবশ্য সেরকম ঘটেনি। গ্রামবাসী থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগ, সহকর্মী সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ দেশ বিদেশে অবস্থানকারী আত্মীয় স্বজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফোনে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রেখে সাহস দিয়েছেন। ওই সময়ে যা তার মনোবল ধরে রাখতে কাজে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আক্রান্তের খবর পাওয়ার পর বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্ত পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষায় তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তার মনোবল অনেক বেড়ে যায়। যা তার সুস্থ্য হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কাজে দিয়েছে।

এখন তিনি তার পরিবার নিয়ে সুস্থ রয়েছেন। তিনি বলেন, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। মনোবল হারাবেন না। করোনায় আক্রান্ত হলেই মৃত্যু, বিষয়টি এমন নয়।