টাঙ্গাইলে বন্যা কবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের এখনই ক্লাসে ফেরা অনিশ্চিত

বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে বন্যা কবলিত ৩৬৬টি প্রাথমিক ও ৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনি ক্লাসে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

যমুনাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, শ্রেনীকক্ষ আর রাস্তাঘাট পানির নীচে থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ফলে করোনায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর তা খোলার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুলে যাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, জেলার চরাঞ্চল ও নীচু এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই রকম।

ফলে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও বন্যা কবলিত এসব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এখনই ক্লাসে ফিরতে পারছেনা; সেটা অনেকটাই নিশ্চিত।

বর্তমান এ পরিস্থিতিতে শিশুদের স্কুলে পাঠানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন অভিবাবকরা।

সরেজমিনে দেখা – 

মঙ্গলবার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অয়নাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায় স্কুলের মাঠে এখনো কোমর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটি হাটু পানির নীচে।

আর বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের মধ্যে দুটির শ্রেনীকক্ষে পানি ঢুকেছে; ব্রেঞ্চগুলো বলতে গেলে পানির নীচে রয়েছে।

সদর উপজেলার চর গালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা একই অবস্থা।

এ বিদ্যালয়ের মাঠে এখনো হাটু পানি রয়েছে। পশ্চিম দিকে একটি ভবনের প্রায় অর্ধেকটা রয়েছে পানির নীচে।

এ সময় স্থানীয় বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, বন্যার পানি নেমে না গেলে ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে পাঠানো ঠিক হবেনা।

কারণ মাঠে এখনো হাটু পানি রয়েছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি নেমে যাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা –

সদর উপজেলার ১৩ নং মগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেও পানি জমে রয়েছে।

সেখানে অবস্থিত মগড়া পালস ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মুল ভবনের সামনে জাল দিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত দেখা যায় স্থানীয়দের। বিদ্যালয়ের পুরো মাঠটি পানির নিচে রয়েছে।

এদিকে কালিহাতি উপজেলার দশকিয়া ইউনিয়নের ১৪ নং সরকারী হাতিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

এ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ পারভিন জানান, স্কুলের মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে।

কিন্ত এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের নদী পাড় হয়ে স্কুলে আসতে হয়। এছাড়াও স্কুলে আসার যে রাস্তাটি রয়েছে তা এখনো পানি নিচে রয়েছে।

তার পরেও স্কুল খোলার সকল প্রস্তুতি নিয়ে তারা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও শতভাগ আশা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এসব স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানির মধ্যেই ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী; এতদিন পর স্কুলে যাবার জন্যে পুরো প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র রাজন জানায়, অনেকদিন ধরে স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না; তাই যত কষ্টই হোক ১২ সেপ্টেম্বর থেকে তা স্কুলে যাবে।

কর্তৃপক্ষের কথা –

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার তিনশ’ ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

এরমধ্যে ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে এখনো পানি রয়েছে।

অপরদিকে ৮৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

কিছু বিদ্যালয়ের পানি নেমে গেলেও বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ক্লাসে না ফেরার সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী আহসান জানান, সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে; পাশাপাশি বন্যা কবলিত স্কুলগুলো নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।

যে কোন উপায়ে ১২ সেপ্টেম্বর শতভাত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

তবে বন্যা কবলিত বিদ্যালয়গুলোতে কত শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জানাতে পরেননি কোন শিক্ষা কর্মকর্তা। সম্পাদনা – অলক কুমার