নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের দেয়ালে দেয়ালে ছেঁয়ে গেছে স্কুল ছাত্র শিহাব হত্যার বিচার ও দোষীদের ফাঁসি দাবির পোস্টার।
পোস্টারে সৃষ্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক শফিকুল ইসলাম রিপনকে কুচক্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার ফাঁসি দাবি করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
মামলাসহ আবাসিক ভবনের এক শিক্ষক গ্রেফতারের পর হত্যার ২৭ দিনেও রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত দোষী গ্রেফতার না হওয়ায় নিহত স্কুল ছাত্রের পরিবার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাসহ হতাশায় ভুগছেন অভিভাবকমহল।
আরো পড়ুন – হত্যাকারী আইনের আওতায় আসবে কি? শঙ্কায় নিহত শিহাবের পরিবার
রোববার (১৭ জুলাই) শহীদ মিনার চত্ত্বর, শহরের ভিক্টোরিয়া রোড, নিরালা মোড়, শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়কের দেয়াল, মার্কেট চত্ত্বরে ওই পোস্টার দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল জেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সৃষ্টি একাডেমির চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রিপনের ছবি সম্বলিত ছাপানো পোস্টারে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের আবাসিক ভবনে পঞ্চম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী শিহাব মিয়ার উপর পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে ন্যাক্কারজনক হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নধারায় প্রবাহের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও পৃষ্টপোষকতায় হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নাটকীয়তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোসহ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পরেছে ওই পোস্টার। ফেসবুকেও দোষীদের ফাঁসি দাবি করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন – আমার শিহাব নাই, আমাগো ঈদও নাই – শিহাবের মা
শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুঈদ হাসান তরিৎ বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই শিহাব হত্যার বিচার নিয়ে আন্দোলনে নামবো।
তরিৎ বলেন, শিহাব হত্যার বিচার দাবি করে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে শুনেছি।
আন্দোলনরত আমরা সকলেই শিক্ষার্থী, পোস্টার ছাপানোর মত এত টাকা খরচ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
শহর জুড়ে পোস্টার লাগানো কি অন্য কোন সংগঠনের আন্দোলন নাকি আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র; এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য –
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে শিহাব হত্যার বিচার দাবিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে শুনেছি।
এটা আন্দোলনের একটি প্রক্রিয়া, এটা চলবেই। ওই স্কুল ছাত্র হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলমান রয়েছে; আশা করছি দ্রুতই এর রহস্য উম্মোচন হবে।
আরো পড়ুন – সোহেল হাজারী কোন অথরিটিতে এমপি? জানতে চান হাইকোর্ট
ঘটনাক্রম –
গত ২০ জুন শহরের বিশ্বাস বেতকা সুপারি বাগান এলাকার সৃষ্টি স্কুলের ছাত্রাবাস থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শিহাবের মরদেহ পাওয়া যায়।
পরে ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষকরা তার মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত শিহাব সখীপুর উপজেলার বেড়বাড়ী গ্রামের প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে।
শিহাবকে চার মাস আগে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলে ভর্তি করে সুপারি বাগান এলাকায় স্কুলেরই একটি ছাত্রাবাসের সপ্তম তলায় রাখা হয়।
ওইদিনই শিহাবের মা আছমা আক্তার বাদি হয়ে আবু বক্করকে প্রধান আসামী করে ৬ জন শিক্ষকের নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অজ্ঞাত আরও সাত আট জনকে আসামী করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মর্গে শিহাবের ময়নাতদন্ত হয়।
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল শিহাবের ময়না তদন্ত করেন।
আরো পড়ুন – এসএসসি-২০২২ শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর, এইচএসসি নভেম্বরে
পরে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠান।
শিহাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শিহাবের মরদেহ উদ্ধারের পর মৃত্যুর কারণ ও হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবু বকরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।
২৮ জুন বিকেলে শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শামসুল আলম ওই মামলায় স্কুলের আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
৩ জুলাই গ্রেফতার স্কুলের আবাসিক শিক্ষক আবু বক্করকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর থেকে ধারাবাহিক শিহাব হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সম্পাদনা – অলক কুমার