পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের সুপারিশ

শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২২ সালে দেশের ১ হাজার ৬৭১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ছেলে ৬২.৩৬ শতাংশ ও মেয়ে ৩৭.৬৪ শতাংশ।

৫১টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই সংখ্যা নির্ধারণ ও প্রকাশ করেছে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন।

এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা এই জরিপে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে

সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছে শূন্য (০) থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু এবং ৯৬০ জন, যা মোট মৃতের ৫৭.৪৮ শতাংশ।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গাইলের ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য উপস্থাপন করা করা হয়।

এসময়তারা জনান, টসঅ্যাপ ‘২০২২ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিবেদন শিরোনামে’  সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাখেন- শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মুবাশ্বির খান।

মোট মৃত্যু :

সমন্বয়কারী মুবাশ্বির খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩২, দ্বিতীয়তে নেত্রকোনা ৬৭, কক্সবাজারে ৬৫, চাঁদপুরে ৫৫ ও সুনামগঞ্জ রয়েছে ৫৪ জন।

এছাড়া মৃগী রোগী, আঘাত জনিত মৃত্যু বা দুর্ঘটনা, সাঁতার না জানা ও অসচেতনতা এ ৪টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে মৃত্যুর কারণ হিসেবে।

মোট ঘটনার ৬২.৫ শতাংশ ঘটানার জন্য দায়ী অসচেতনতা।

এমনও দু-একটি ঘটনা দেখা গিয়েছে, যেখানে বালতি কিংবা পাতিলের পানিতে ডুবেও শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।

মা-বাবা বা শিশুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন বা বিশ্রামরত থাকেন তখনই সিংহ ভাগ শিশুর মৃত্যু ঘটে।

বিশেষ করে সকালে কাজের সময় থেকে শুরু করে দুপুরের বিশ্রামের সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে।

সাঁতার না জানার কারণে ৫ বছরের উপরে ৩১.০৭ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।

যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি শিশু মারা গিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে ২২৮ জন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুে ঘটনা ঘটে জুলাই মাসে ২০০ জন এবং সবচেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফেব্রুয়ারী মাসে ৬৫ জন।

অন্যদিকে, শীতকালের চেয়ে বর্ষা বা তুলনামূলক গরমের সময় পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

শহর ও গ্রামের তুলনায় গ্রামের শিশুদের নদী, পুকুর বা ডোবায় গোসল করতে গিয়ে বেশি মৃত্যু বরণ করতে দেখা গিয়েছে।

শহরের মারা যাওয়া বেশির ভাগ শিশুই পাঁচ বছরের উপরের এবং সিংহ ভাগ সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়।

আয়োজকদের বক্তব্য :

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংবাদ বিশ্লেষণ করে আমাদের এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

অনেক ঘটনাই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি যেগুলো হিসেব করলে মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন মতে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটছে অসচেতনতার কারণে।

অন্যদিকে, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

শিশু মৃত্যুরোধে প্রস্তাবনা :

যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশুর যত্ন, দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সব সময় মা বাবা বা অন্য কারও দায়িত্বে রাখা, পুকুর বা ডোবার চারপাশে বেড়া দেয়া, দলবেধে বা একাকী শিশুকে জলাশয়ে গোসল করতে না দেওয়া, বালতি বা পানি পূর্ণ পাত্র সব সময় ঢেকে রাখা, পাঁচ বছর বয়স হলে শিশুকে সাঁতার শেখানো, সাঁতার শেখার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।

নদীপথে যাত্রার সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অবলম্বন করা; ঝুঁকিপূর্ণ নৌযাত্রা পরিহার করা; অভিভাবকদের সচেতন করা।

পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ও পরে ভুক্তভোগী ও প্রতক্ষ্যদর্শীর করণীয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেওয়া, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা ব্যবহার করার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী গণসচেতনা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, শহরের শিশুদের বাধ্যতামূলক সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা।

এর পাশাপাশি-নিয়মিত তৃণমূল পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা, এ সম্পর্কিত কাজে আগ্রহী সমাজকর্মী ও সংগঠন সমূহকে যথাযথ সহযোগিতা করা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ প্রকল্পের সদস্য মির্জা রিয়ান ও আতিয়া আদিবা জারা প্রমুখ। সম্পাদনা – অলক কুমার